সর্বজনীন পেনশন বাধ্যতামূলক হবে: চেয়ারম্যান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চালু হওয়ার চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সর্বজনীন পেনশনে সাধারণ মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এ কারণে পরিসর বাড়াতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ইমদাদ হোসাইন।

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৬৬ জন নিবন্ধন করেছেন। ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি সাবসক্রিপশন জমা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রগতিতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুরক্ষা স্কিমে। জাতীয় পেনশন কর্র্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ১১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে কবিরুল ইজদানী খান বলেন, ‘নতুন কোনো জিনিস যখন আসে, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে অনেক বেশি। প্রত্যেক জিনিসের শুরুটা যখন হয়, তখন খুব আড়ম্বরভাবে হয়। তারপর মানুষ ধীরে ধীরে চিন্তা করে, এনরোলমেন্ট করে। আমাদের পেনশন হলো ঐচ্ছিক বা অপশনাল। কিন্তু অন্য যেসব দেশে এ ধরনের স্কিম চালু আছে, যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপানসহ এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশে বেসরকারি খাতের পেনশন স্কিমটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের এখানে ব্যক্তির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্যও স্কিমটি অপশনাল। অপশনাল যখন কিছু হবে, মানুষ অনেক চিন্তাভাবনা করেই শুরু করেন।’

যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধক (আরজেএসসি) এ নিবন্ধনভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা এটি অপশনাল রাখছি। এটি অবশ্যই ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, কোরিয়ার মতো প্রত্যেকটি দেশে বেসরকারি খাতের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। বেসরকারি কোম্পানিগুলো যদি পেনশন স্কিমে এগিয়ে আসে, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মী চাকরি ছাড়ার আগে চিন্তা করবেন অন্য প্রতিষ্ঠানে সুবিধাটি রয়েছে কি না। একটা সময়ে এমনও হবে, যেসব প্রতিষ্ঠানে পেনশনের সুবিধা নেই, তারা দক্ষ, ভালো কর্মীও পাবে না। আমরা এখন এনজিওগুলোকে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। আমরা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে ২০টি বড় এনজিও ছিল। ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, টিএমএসের মতো এনজিওগুলো ছিল। তারাও আগ্রহ দেখিয়েছে।’

কবিরুল ইজদানী খান

বেসরকারি খাতের চাকরি পরিবর্তনের ফলে পেনশনের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা যাবে কি না এমন প্রশ্নে জাতীয় পেনশন কর্র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, এই সুযোগ রাখা হয়েছে। কারণ হলো নিবন্ধনের সময় সবার নিজস্ব একটি আইডি হয়ে যায়। যে স্কিমেই যাবে সে আইডি নিয়েই তিনি মুভ করবেন। 

এ স্কিমে যুক্ত গ্রাহকদের কখনো পেনশন অফিসে আসতে হবে না জানিয়ে কবিরুল ইজদানী বলেন, পুরো সিস্টেম আইটি প্ল্যাটফর্মে, তারা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের যে টেলিফোন নম্বর আছে সেখানে ফোন করলেই সমাধান পাবেন। বেসরকারি খাতের জন্য যে প্রগতি স্কিম করা হয়েছে সেটিও সম্পূর্ণ আইটি বেইজড। আমরা ইতিমধ্যে আরজেএসসির সঙ্গে চুক্তি করেছি। আপনার কোম্পানির নাম যদি দিই আর যদি তারা আরজেএসসির নিবন্ধনভুক্ত হয়, তাহলে পুরো তথ্যই চলে আসবে।

কেউ যদি হঠাৎ চাঁদা দিতে অক্ষম হয়ে পড়েন, তার সুরক্ষায়ও ব্যবস্থা রয়েছে স্কিমটিতে। কবিরুল ইজদানী জানান, তার আলাদা অ্যাকাউন্ট আছে, তার আইডির ব্যালান্সের ওপরই মুনাফার হিসাব করা হবে। টাকার হার বাড়লে বা কমলেও কোনো সমস্যা নেই। ব্যালান্সের ওপরই মুনাফা দেওয়া হচ্ছে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের স্কিমে যুক্ত করার উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের অংশগ্রহণ কম থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সারা দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছি। সব ইউডিসিতে পোস্টার পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই তারা ৬৮টি প্রশ্নের উত্তর পাবেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যাতে এগুলোর উত্তর সহজে পান, এজন্য ইউডিসির কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব, যাতে তারা প্রশ্নগুলোর উত্তর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে সহজেই দিতে পারেন এবং ন্যূনতম একটি চার্জ নিয়ে যাতে তারা মানুষদের নিবন্ধন করিয়ে দেন। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলায় আমরা জনপ্রতিনিধিদেরও বুঝিয়েছি, তারা যাতে তাদের জনগণের কাছে তা নিয়ে যান। ইউএনওদেরও বলেছি তারা যেন তাদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের বোঝান।

পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের যুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা প্রবাসী আয় পাঠান তারা একেক দেশে একেকভাবে পাঠান। কেউ কেউ এজেন্ট, কিংবা এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠান। এখন বিকাশ, নগদেও পাঠানো যাচ্ছে। দেশে পেনশনে অনেক অপশনের মধ্যে একটি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু বিদেশে একটিই অপশন শুধু ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড। বিদেশে থাকা আমাদের অধিকাংশ কর্মীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই। কিন্তু পেনশনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা রাখা হয়েছে আরেকটি কারণ বিবেচনা করে বিদেশে অনেক বাংলাদেশি আছেন যারা স্থায়ীভাবে থাকেন। তাদের আবার এসব কার্ড আছে। সুরক্ষা স্কিমে তারা তাদের মা-বাবা, ভাইবোন বা আত্মীয়স্বজনের নামের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এটা তারা করতে পারেন তাদের আত্মীয়দের এনআইডি দিয়ে।

‘কিন্তু আমাদের যে কর্মীদের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড নেই তাদের জন্য আমরা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খুঁজছি। অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। সিঙ্গাপুরে, মালয়েশিয়াতে তাদের রেমিট্যান্স হাউজ আছে। আমরা জনতা ব্যাংকের সঙ্গেও বসেছি, আবুধাবিতে তাদের চারটি নিজস্ব শাখা আছে, যেখানে প্রায় ১৩ হাজার বাংলাদেশি গ্রাহক আছে। প্রবাসীরা সরাসরি জনতা ব্যাংকের পেনশন স্কিমে টাকা পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি বেসরকারি যেসব ব্যাংকে বেশি রেমিট্যান্স আসে সেগুলোর সঙ্গেও চুক্তি করতে যাচ্ছি। শিগগিরই দুটো বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হবে। এর বাইরে আমরা রিয়া, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামের সঙ্গেও বসেছি। তাদের সফটওয়্যারে পেনশন স্কিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর যোগ করার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাদের সফটওয়্যারে পেনশনারের আইডি যোগ করার জায়গা নেই।’

প্রবাসীদের কাছে পেনশন স্কিমের প্রচারের বিষয়ে কবিরুল ইজদানী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা তিনবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র সচিব, গভর্নর, অর্থ সচিব ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের অবহিতকরণ সভা করেছি। এটাকে কীভাবে আরও বেশি এক্সপ্লোর করা যায়, প্রত্যেকটি জায়গায় কর্মকর্তারা যেন তাদের বক্তব্যে এটি বলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035109519958496