সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা; কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বা সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছে ইউজিসি। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সই করা চিঠি দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়। এতে ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা প্রতিপালন প্রসঙ্গ’ উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এসব পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
নির্দেশনাগুলো হলো- সব প্রতিবাদকারী কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো; দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বা প্রক্টরকে ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন মর্মে আদালত আশা করে এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারবেন, আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।
সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ক্লাস পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে লাগাতার কর্মসূচি পালন করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনাগুলোই আমরা উপাচার্যদের পাঠিয়েছি। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আদালতের নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া কমিশন দায়িত্ব মনে করেছে। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের আন্দোলন সমাপ্ত করার বিষয়ে কমিশন কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউজিসির এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইউজিসি নির্দেশনা দিলেও এতদিন ধরে শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। এটি দুঃখজনক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, আমি এখনো বিজ্ঞপ্তিটি দেখিনি। তবে এমন বিজ্ঞপ্তির অর্থ হলো তারা অন্য প্রশাসনের হয়ে কাজ করছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে, শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটি তারা যোগ করতে পারতেন। সেটি তারা করেননি। আলোচনার বিষয়েও তারা উদ্যোগী হননি।