দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষকগণ বিদ্যমান আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একইসঙ্গে সমিতির পক্ষ থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যকর পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে ৩০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কার্যকর পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৪-এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ কী ধরনের বৈষম্যের শিকার হবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সবাই একমত পোষণ করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষকগণ বিদ্যমান আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
কর্মসূচির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নতুন এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে ৩০ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মাঝে। সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এ ব্যবস্থাপনার বিপক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে। এটি বৈষম্যমূলক। জাতির পিতা আমাদের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন, নিজস্ব বেতন কাঠামো থেকে শুরু করে নিজস্ব পেনশন সিস্টেম সব ক্ষেত্রেই আমাদের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন। সুতরাং নতুন এই সর্বজনীন পেনশন সিস্টেমকে আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
তিনি বলেন, আমাদের বেতন কম, কোনো সুযোগ সুবিধা নেই এবং সর্বশেষ যে পেনশন সেটাও যদি একটি অভিন্ন নীতিমালায় চলে যায়, সবার জন্য একই হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে মেধাবীরা কেন আসবে? স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে করতে হলে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষা এবং শিক্ষক বান্ধব নীতি।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি চায় না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও। ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন পেনশন নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এটি প্রত্যাখান করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি সাব কমিটি করেছি। এই কমিটিতে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তাদের নিয়ে আমরা পরবর্তীতে সভা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করব। তবে আমরা আশা করছি এর আগেই সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টি সমাধান করবেন। আমরা চাই না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হোক।