দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ লক্ষ্যে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল ও অবসর-সুবিধার বিদ্যমান জটিলতা স্থায়ীভাবে নিরসন এবং তাঁদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনতে একটি প্রতিবেদন তৈরি ও সুপারিশ করবে ওই কমিটি। এরপর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলামকে এই কমিটির আহ্বায়ক করে করা হয়েছে। ওই কমিটি আজ রোববার প্রথম সভায় বসবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার বিষয়টি আলোচনা ও সুপারিশ হয়। বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।
কমিটির ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, অবসরসুবিধা প্রাপ্তির জন্য অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার একটা রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। বিএনপি সরকার এই খাতে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে একটা বিশাল গ্যাপ তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের বেতন স্কেলে বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই খাতের ব্যয়ও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও সরকার এ সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৬৪টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ ২০ হাজার ৪৩৭টি, বাকিগুলো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা । এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন সাড়ে ৫ লাখের মতো।
এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের সুবিধা পেয়ে আসছেন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে থেকে শুরু হয়েছে অবসরসুবিধা দেওয়া। এই দুই সুবিধা বাবদ শিক্ষকেরা চাকরিকাল অনুযায়ী এককালীন অর্থ পান। আইন অনুযায়ী, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) থেকে চাঁদা হিসাবে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসরসুবিধা বোর্ড ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্ট ৪ শতাংশ পায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কল্যাণ ট্রাস্টে বছরে গড়ে আবেদন পড়ে ১৬ হাজার ৮০০ থেকে ১৭ হাজার, যা নিষ্পন্ন করতে প্রয়োজন ৭২০ কোটি টাকা। আর অবসরসুবিধা বোর্ডে বছরে ১০ হাজার ৮০০টি আবেদন পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পন্ন করতে প্রয়োজন ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। দুই খাতে প্রতিবছর ৫৭০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসরসুবিধা বোর্ডে প্রায় ৬৭ হাজার আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিম দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের যাত্রা শুরু হয়। পরে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন স্কিম চালু করা হয়। গত ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’য়ে যুক্ত হতে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।