অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষক সমিতি।
শনিবার (২৯ জুন) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি জি এম সাদিকুল ইসলাম।
এর আগে. বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি জি এম সাদিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরাফাত রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে চুয়েট শিক্ষক সমিতি আগামীকাল (রোববার) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং পরদিন সোমবার থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে। কাল পরীক্ষা কার্যক্রম চললেও পরদিন থেকে সব ধরনের একাডেমিক ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকবে।
শিক্ষক নেতারা জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারাবে। শিক্ষকরা সবসময় ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে কাজ করেন। বর্তমান যে পেনশন স্কিম সরকার চালু করেছে সেখানে শিক্ষকরা আগের মতো সুযোগ সুবিধা পাবেন না।
জানতে চাইলে চুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের আগের যে পেনশন স্কিম সেখানে শিক্ষকরা অবসরের পর এককালীন অর্থের পাশাপাশি মাসিক টাকাও পেত। এখন যে সর্বজনীন স্কিম করা হচ্ছে সেখানে এককালীন কোনো টাকা থাকবে না। তাছাড়া প্রতিমাসে সেখানে টাকাও দিতে হবে।’
‘প্রধানমন্ত্রী গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ পেনশন স্কিম বেসরকারি চাকরিজীবিদের জন্য করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমাদের সেখানে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে চুয়েটের শিক্ষকেরা একাত্মতা পোষণ করেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’
‘বাধ্য হয়ে আমরা আজ আন্দোলনে দাঁড়িয়েছি। অনতিবিলম্বে এ বৈষম্যমূলক স্কিমের আওতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মুক্ত রাখতে হবে।’
কর্মবিরতিতে কোনো ক্লাস না হলেও পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান এ শিক্ষক নেতা।
গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতির পাশাপাশি ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। ঘোষণা অনুযায়ী গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ আরও বেশকিছু দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরাও যাতে অসুবিধায় না পড়ে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। কর্মবিরতিতে ক্লাস না চললেও পরীক্ষা চলছে। তিন দিন কর্মবিরতির পরও সরকার থেকে আমাদের সঙ্গে এখনও কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (রোববার) থেকে সারা বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করব। তবে পরীক্ষাসহ একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে। দাবি আদায় না হলে ১ জুলাই থেকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন। তখন সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। সেখানে বলা হয়, আগামী ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি সংস্থকার চাকরিতে যারা নতুনভাবে যোগদান করবেন, তারা আগের মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুন চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।