লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী-মান্দারী ইউনিয়নের ওয়াপদা খালের ওপর সেতু না থাকায় তিনটি ইউনিয়নের দেড় লাখের অধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন। সাঁকোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন ঐসব এলাকার শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা। এমনকি বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার জনপ্রতিনিধিরা কেউ কথা রাখেননি। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে এমপি-মন্ত্রীরা এই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের ওয়াদা করে এলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেননি তারা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে জনপ্রতিনিধিদের ওপর।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ আবুল কালাম ও নুরুল আমিন জানান, ষাট দশকের দিকে মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশরোধে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিশ কিালোমিটার দীর্ঘ একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। পরবর্তী সময়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা ও বতর্মান লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পানি নিষ্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ওয়াপদার খাল কাটা হয়। যার মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের পূর্ব অঞ্চলের পানি অতি সহজেই মেঘনায় পতিত হয়।
গত রবিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন অনেক কষ্টে ওয়াপদা খালের ওপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বয়োবৃদ্ধ মানুষ এই সাঁকো দিয়ে চলতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের অনেকেই উঠছেন না সাঁকোতে। কয়েকজন জানান, সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রীরা খালে পড়ে আহত হয়। গত ছয় মাসে অন্তত বিশ জন শিক্ষার্থী ও বয়োবৃদ্ধ মানুষ এই সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এমপি প্রার্থীরা এই অঞ্চলের মানুষের ভোট পাওয়ার জন্য সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে ওয়াপদা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের ওয়াদা দিলেও দীর্ঘ বিশ বছরেও তা বাস্তবায়ন করেনি।
দিঘলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির জানান, ওয়াপদা খালের এই সাঁকো দিয়ে দিঘলী, মান্দারী, চরশাহী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর শহরে যাতায়াত করছে লোকজন।
দিঘলী জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন, দিঘলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলরাম দাস এবং দিঘলী বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুজ জাহের জানান, সাঁকো পারাপারের ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনিয়মিত।
দিঘলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন চৌধুরী জাবেদ, মান্দারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রুবেল পাটোয়ারী ও চরশাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই তিনটি ইউনিয়নের দেড় লাখের অধিক মানুষের জীবন-জীবিকা ও যাতায়াতের সুবিধার্থে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের দিঘলী এলাকায় ওয়াপদা খালের ওপর ব্রিজটি নির্মাণ খুবই জরুরি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহা আলম পাটোয়ারী বলেন, ওয়াপদা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমার জানা নেই।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এ.কে.এম শাহজাহান কামাল বলেন, ওয়াপদা খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জন্য একটি ডিও লেটার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।