জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের প্রতিবাদে সমাবেশ ডেকেছে সাংবাদিকদের চার সংগঠন। আগামীকাল রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক মসিউর রহমান খান।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, ভয়ভীতি সৃষ্টি করতেই নজিরবিহীনভাবে সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠনগুলোর ১১ জন নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের পেশাদার সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত নেতাদের ব্যাংক হিসাব এভাবে তলব করা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের মনে নানা ধরনের আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বিএফআইইউর এই পদক্ষেপকে সাংবাদিকদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টির কৌশল বলেও মনে করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন,‘আমরা মনে করছি এটি নিশ্চয়ই উদ্দেশ্যমূলক। এটি স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের প্রতি হুমকি। এটি দুরভিসন্ধিমূলক মনে করছি। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই।’ পরে তিনি প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, তাদের সন্দেহ জাগে এটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না। কারণ, কেউ কিছু বলতে পারে না। তিনি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা বলেছেন কিছুই জানেন না। এ জন্য বিষয়টি উদ্বেগের। তিনি বলেন,এই বক্তব্য কারও ব্যক্তিগত নয়,এগুলো সংগঠনের কথা।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে ডিআরইউ'র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনগুলোর নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাওভাবে এই ধরনের পদক্ষেপ উদ্দেশ্যমূলক। তারা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একই সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রতিকার দাবি করেন। তাঁরা মনে করছেন এতে করে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালানো হয়েছে, যা কারও কাম্য নয়।
তলব করার পর কার অ্যাকাউন্টে কত পাওয়া গেছে তা জন সমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি।
এর আগে এক প্রতিক্রিয়ায় মসিউর রহমান খান বলেছিলেন, ‘আমার অ্যাকাউন্টে যা আছে তা জানলে রাষ্ট্রই লজ্জা পাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেওয়া ফরমে নাম, পিতা-মাতার নাম, এনআইডি ইত্যাদি চাওয়া হয়। সেখানে কে কোন সংগঠনের নেতা তা লেখা থাকে না। কিন্তু ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চাওয়ার সময় কে কোন সংগঠনের এবং কে কোনপন্থী তা উল্লেখ করা হয়েছে যা, নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। কারো হিসেবে অস্বাভাবাবিক লেনদেন বা মানি লন্ডারিং বা জঙ্গীর টাকা লেনদেন হলেই কেবল ব্যাংক হিসেব তলব করার নজির আছে, কিন্তু সাংবাদিক নেতাদের অ্যাকাউন্টে এমন কোনো লেনদেনের তথ্য ছাড়াই তলব এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করার মাধ্যমে সাংবাদিকদের হেয় করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের একাংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, বিএফইউজের আরেকাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউর সভাপতি মোরসালীন নোমানী প্রমুখ।
সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকসহ উল্লেখিত চারটি সংগঠনের ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সরকারের একটি সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এই তালিকায় থাকা ১১ জন সাংবাদিক নেতা হলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম আব্দুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের শাখায় এই ১১ সাংবাদিকের নামে কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব বর্তমানে বা আগে পরিচালিত হয়ে থাকলে সব হিসাবের যাবতীয় তথ্যের সফট কপি (যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাবগুলোর তালিকা), হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, প্রোফাইল ফরম, টিপি ও অনুরূপ দলিল ও হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী ১৩ সেপ্টেম্বর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।