রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা জীবনের স্মৃতিচারণা করেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা প্রেসক্লাবে পৌঁছান। এ সময় প্রায় দেড় ঘণ্টা তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি তাঁর ছাত্রজীবনের রাজনীতি ও সাংবাদিকতার স্মৃতিচারণা করেন। সাংবাদিক বন্ধু শিবজিত নাগের অনুপ্রেরণাতেই তিনি সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বলে জানান। শুরুতে কাজ করেন বাংলার বাণী পত্রিকায়। সেই সূত্রেই পাবনা প্রেসক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। একপর্যায়ে পাবনা প্রেসক্লাবের ২২তম সদস্য হন।
পাবনা প্রেসক্লাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি ও তাঁর সাংবাদিক–রাজনৈতিক সহকর্মীরা প্রেসক্লাবের ছাদে বসতেন। সেখানে দেশ নিয়ে, মানুষ নিয়ে আলোচনা হতো। গুণীজনদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা হতো, জানা হতো। সবাই মিলেমিশে সাংবাদিকতা করতেন। পাবনা প্রেসক্লাব এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তাই তিনি পাবনায় এলেই প্রেসক্লাবে ছুটে আসেন।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় তখন মাঠে–ময়দানে কাটত। এরপর বিকেলের আড্ডা হতো পাবনা শহরের লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের পেছনে কমরেড প্রসাদ রায়ের বাড়ির নিচে। রাতের আড্ডা হতো প্রেসক্লাবের ছাদে। তখন এই ছাদে সাংবাদিক মির্জা শামসুল ইসলাম, কমরেড প্রসাদ রায়, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আমিনুল ইসলাম বাদশা, সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত রণেশ মৈত্র ও ইত্তেফাকের সাংবাদিক ভাষাসৈনিক আনোয়ারুল হকসহ বহু গুণীজনের আড্ডা ছিল।
রাজনীতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে কত “তন্ত্র”ই দেখেছি। সমাজ বদলানোর কথা বলা এসব কোনো তন্ত্রই কাজে লাগেনি। মূলত দেশের মানুষ কী চায়, তার মধ্য দিয়েই সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমাজব্যবস্থা ধার করা তন্ত্র দিয়ে চলে না।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের স্মৃতিচারণা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কেউ মাওবাদী, কেউ কার্ল মার্ক্স, কেউ লেনিনের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে কোনো তন্ত্রই কাজে লাগেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তো বঙ্গবন্ধু নিয়ে। তাঁকে লালন করে, তাঁকে বরণ করেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাঁর আদর্শকে বুকে লালন করেই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সেই আন্দোলনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।’
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং অপর দুই সাবেক সভাপতি শিবজিত নাগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ।
প্রসঙ্গত, পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর দীর্ঘ ৬৩ বছর জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা একই ছাদের তলায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামে এই ক্লাবের সদস্যদের ভূমিকা রয়েছে। পাবনা প্রেসক্লাবের ৯ জন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৬ জন সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, দেশবরেণ্য শিল্পপতি প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারসহ বহু গুণী মানুষ এ ক্লাবের সদস্য।