ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুসন্ধানমূলক প্রোগ্রাম তালাশের প্রধান ও উপস্থাপক আব্দুল্লা আল রাফি। বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি--
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অবস্থা এখন কেমন?
রাফি : অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ফ্যাক্ট–চেকের বড়ই অভাব।সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করা উচিৎ। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় হুমকি- ভয়ভীতি ও মামলা খুব স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যেমন : কিছুদিন আগে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হুমকি ও ২টি মামলার শিকার হয়েছি। সেসময় কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন সাহায্য আমরা পাইনি। আমাদেরকেই আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কৌশলে কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরতে হয়েছিলো।
সাংবাদিকতায় ফ্যাক্ট- চেক কেন জরুরি?
রাফি : ফ্যাক্ট চেক খুবই জরুরি একটি বিষয়। বর্তমানে ভাইরাল হবার নেশায় ফ্যাক্ট চেক খুব একটা করা হয় না। সঠিক–গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য সাংবাদিকতার জন্যে প্রত্যেকটি গণমাধ্যম অফিসে ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করা উচিত। কোনো সংবাদ প্রকাশের আগে সেই সেল থেকে ক্লিয়ারেন্স নেওয়া উচিত।
ফেক নিউজ বন্ধ হচ্ছে না কেন ?
রাফি: ভাইরাল হবার প্রতিযোগিতা ফেক নিউজকে আরো উৎসাহিত করে। কোনো সংবাদ ভাইরাল না হলে, সেই সংবাদের কোনো মুল্য থাকে না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাংবাদিকতায় কি কোনো প্রভাব ফেলেছে?
রাফি : অবশ্যই প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ফেসবুকে মানুষ যা পাচ্ছে তাই লিখছে। কোনো যাচাই বাছাই ছাড়া। যার যেটা ইচ্ছে করছে তাই ওয়ালে আপলোড করছে। কিছু মানুষ তাই আবার বিশ্বাস করছে।
ফেসবুক সাংবাদিকতা থেকে উত্তরণের উপায় কি?
রাফি : ফেসবুকের অনেক উপকারি দিক আছে, আজকাল প্রাথমিক তথ্য কিন্তু ফেসবুক থেকেই পাওয়া যায়। প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম অফিসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক বিট তৈরি করা উচিত। ফেসবুকে কোনো তথ্য কিংবা কোনো দাবি উঠলে সেটির সত্যতা নিয়ে গবেষণা করে সংবাদ উপস্থাপনা করা যেতে পারে।
সাংবাদিকতার কনটেন্ট কি ভাইরাল নির্ভর হয়ে যাচ্ছে দিন দিন?
রাফি : এটি সাংবাদিকতাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। বর্তমানে সাংবাদিকতায় ভাইরাল বিষয়ের ওপর বেশী জোর দেয়া হচ্ছে। অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ সাংবাদিকরা এখন ভাইরাল হবার জন্যে ছুটছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব জরুরি।
সঠিক সাংবাদিকতার জন্যে সংগঠনের গুরুত্ব আপনার দৃষ্টিতে কেমন?
রাফি : বতর্মানে সাংবাদিকদের অনেকগুলো সংগঠন আছে। এসব সংগঠনের অনেক দায়িত্ব আছে। ধরুন তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। এতে করে নিত্য নতুন বিষয়ের সাথে সাংবাদিকরা পরিচিত হতে পারবে। বিপদে আপদে গণমাধ্যম কর্মীদের পাশে দাড়ানো উচিত এসব সংগঠনের। বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি আদায়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে সাংবাদিকদের এসব সংগঠন।
আইসিটি অ্যাক্ট কি বাতিল করা উচিত
রাফি : অবশ্যই এ আইন বাতিল করা উচিত। এটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য অন্তরায়। এ আইন সাংবাদিকতার জন্য এক ধরনের থ্রেট।
সাংবাদিকদের নামে তো মানহানির মামলা হচ্ছে?
রাফি : এটি অনেক আগে থেকে ঘটে আসছে। সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যে মূলত এসব মামলা করা হয়। যাতে আর সে লেখার সাহস না করে। এসব হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে হবে।