মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াছিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া নেহাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার ১২ শিক্ষক এবং চার কর্মচারী নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। কাগজ-কলমে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা মেলে সাত শিক্ষার্থীর।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। দীর্ঘদিন ভালোভাবে কার্যক্রম চললেও ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের সিডরের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির দৈন্যদশা শুরু হয়। মাসের-পর মাস প্রতিষ্ঠান প্রধান (সুপার) আনিসুর রহমান অনুপস্থিত থেকে অফিস সহায়ক মধু মিয়ার সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা। দুটি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থী উপস্থিতি সবমিলিয়ে সাতজন। বছর শেষ হতে চললেও ক্লাসরুমে সরকারি বইগুলো পড়ে আছে। বই বিতরণ করার মতো শিক্ষার্থী নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে ১২ শিক্ষক থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র আটজন। এদিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে চার ও সপ্তম শ্রেণিতে তিন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণিকক্ষ শিক্ষার্থীশূন্য।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কাগজ-কলমে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫-২০ জনও পাঠ গ্রহণ করে না। অথচ শিক্ষক-কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন। কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই কম্পিউটার ও ল্যাব। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল-বিমুখ হয়ে পড়ছে। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য অফিস সহায়ক মধু মিয়া ও সুপার যোগসাজশ করে সব সুবিধা গ্রহণ এবং নিয়োগ-বাণিজ্য করেন। তাদের জন্যই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে।
মাদ্রাসার সহকারী সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে যোগদান করার পর দেখতে পাই শিক্ষার্থী সংখ্যা কম। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য ও অফিস সহায়ক মধু মিয়া এবং সুপার আনিসুর রহমানের কারণেই মাদ্রাসাটির এ অবস্থা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অফিস সহায়ক মধু মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘কয় টাহা লাগবে! এ রকম প্রতি বছর তদন্ত হয়। কাগজপাতি সব সুপারের কাছে সঠিকভাবে জমা আছে।’
উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাদশা মাদ্রাসাটির দৈন্যদশার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তিনি কারণ উল্লেখ করেননি।
মাদ্রাসা সুপার আনিসুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে ইউএনও আবদুল কাউয়ূম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।