তলবি সভা ডেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন সমিতির সাধারণ সদস্যরা। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সমিতির নির্বাচনের নামে এক কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটনো হয়েছে দাবি করে সমিতির সাধারণ সদস্যরা নতুন নির্বাচনের জন্য করণীয় নির্ধারণে গতকাল বৃহস্পতিবার এই তলবি সভা ডাকেন। সমিতির ১নং হলরুমে অনুষ্ঠিত এই তলবি সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। সভায় ১৫-১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি উল্লেখ করে আগামী ১৪-১৫ জুন সমিতির নতুন নির্বাচনের তারিখ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ্ আহমেদ বাদলকে সদস্য সচিব করে সমিতির ১৪ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়েছে এই তলবি সভা থেকে। এই কমিটি সমিতির সংবিধান অনুযায়ী অফসন ফরম বিতরণ করে ১৫ মের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং ১৪ ও ১৫ জুন সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট বারে (আইনজীবী সমিতিতে) যে ঘটনা ঘটে গেছে, তাতে শুধু সুপ্রিম কোর্ট বারে না, বাংলাদেশের প্রতিটি বারের সদস্যরা আজ প্রশ্ন তুলছে, আজ সুপ্রিম কোর্ট বারের এ অবস্থাটা কী করে হলো? সে জন্য সুপ্রিম কোর্ট বারের দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, সেই ঐতিহ্যে কলঙ্কলেপন করেছেন, তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া দরকার। যে কলঙ্কলেপন করেছে, সেই কলঙ্ক মোছার কাজটা অতিসত্বর করা প্রয়োজন বলে আপনারা সবাই কি মনে করেন না। দ্বিতীয় হচ্ছে, আমাদের আইনজীবীদের মর্যাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মর্যাদা সমিতির সবার জন্য আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে আগামী নির্বাচনে আমি আশা করি, সেই সংকট অতিক্রম করে আমরা একটি স্বাধীন বার সমিতি করব।
সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির সংবিধানের ১৭(৩)(এ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাধারণ সদস্যদের ব্যানারে এই তলবি সভা আহ্বান করা হয়। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় সমিতির সাবেক সভাপতি, সম্পাদক, সিনিয়র আইনজীবীসহ অনেক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তব্য দেন তলবি সভা আহ্বানকারী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। সভায় সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সম্পাদক আলহাজ গিয়াস উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকশ আইনজীবী অংশ নেন। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে যোগাযোগ করে বারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বারের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি। ১ এপ্রিল থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা বারের অফিস অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তলবি সভায় গঠিত ১৪ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যরা হলেন—সিনিয়র আইনজীবী আলহাজ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মো. নজরুল ইসলাম, ড. রফিকুল ইসলাম মেহেদী, ড. এম খালেদ আহমেদ, তৈমূর আলম খন্দকার, এস এম খালেকুজ্জামান, মির্জা আল মাহমুদ, মো. সাইফুর রহমান, ব্যারিস্টার সরওয়ার হোসেন, ড. শামসুল আলম ও এস এম জুলফিকার আলী জুনু। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে, সংবিধান প্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার জমীর উদ্দিন সরকার, এফ এম হাসান আরিফ, জয়নুল আবেদীন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান ভূইয়া, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম কে রহমান ও আবু সাইদ সাগরকে। সভায় সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ সমিতির রেজুলেশন পাঠ করেন এবং এই রেজুলেশন সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়। রেজুলেশেনে বলা হয়েছে, তলবি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্ট বার অফিস সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সেক্রেটারি আব্দন নূর দুলালের আদেশে কাজ করবে না। ১ এপ্রিল থেকে সমিতির অফিস শুধু অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের আদেশে পরিচালিত হবে। অ্যাডহক কমিটি শুধু সমিতির রুটিন কাজগুলো করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গত সমিতির বর্তমান সম্পাদক ও গত ১৫ ও ১৬ মার্চের নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্যানেল থেকে বিজয়ী অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল বলেন, তলবি সভা ডাকতে হলে আগে সমিতির সম্পাদককে নোটিশ করতে হয়। নোটিশ করলে সম্পাদক সে অনুযায়ী তলবি সভা আহ্বান না করলে তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু আমাকে কিংবা আমার অফিসকে কোনো নোটিশ প্রদান করা হয়নি। এটাকে আমরা আমলেই নিচ্ছি না। যারা তলবি সভা করেছে তারা হাস্যকর একটি কাজ করেছে। উল্লেখ্য, সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে বিভেদ চলতে থাকে। একপর্যায়ে সমিতির আওয়ামী ফোরামের নেতাদের পক্ষ থেকে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোট গ্রহণ করতে থাকলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিচার্জ করে বেশ কিছু আইনজীবীকে আহত করেন। আহত করেন সাংবাদিকদেরও। পরে সমিতির দু’দিনব্যাপী একতরফা ভোটে সভাপতি, সম্পাদকসহ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদেই আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বিজয়ী হন।