সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে জিপিএ-৫ বাড়লো ৫৩৩১৬, কমলো পাসের হার

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

কোভিড মহামারির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়া হয়েছিলো সাবজেক্ট ম্যাপিং বা অটোপাসে। এ বছরও পরীক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে ফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর উচ্চ পাসের হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। ফল ঘোষণার আগের দিনও সবাইকে অটোপাস করিয়ে দেয়ার দাবিতে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সে দাবি মানা না হলেও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ফলে জিপিএ ৫ বেড়েছে অর্ধলাখেরও বেশি। তবে এবারের  এইসএসসি ও সমমানে পাসের হার আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলে দেখা যাচ্ছে, ১১টি বোর্ড মিলিয়ে এবার গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এই হার গত বছরের চেয়ে দশমিক ৮৬ শতাংশ কম।  

গত পাঁচ বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অটোপাসে শতভাগ সাফল্য ঘোষিত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই পাসের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে।  ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পরীক্ষা নেয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, বাছাই করা বিষয়ে। তাতে স্বভাবতই পাসের হার কমে যায়। সেবার ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেন। পরের বছর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গড় পাসের হার কমে হয় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সিলেবাস ও পরীক্ষার বিষয় বাড়ানোয় গত বছর বা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে পাসের হার আরো নেমে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ দাঁড়ায়। এ বছর তা আরো দশমিক ৮৬ শতাংশ কমলো।

তবে পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। এ বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। গত বছর ৯২ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এর মানে, গত বছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ৩১৬ জন বেশি। 
এর আগে শতভাগ অটোপাশের পরের বছর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানে রেকর্ড ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। 

এ বছর গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ হলেও মোট ১১টি শিক্ষাবোর্ডের পাসের হারে এগিয়ে আছে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে। এই বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০। এর পরেই অবস্থান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের। এই বোর্ডের অধীন এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষায় পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আর পাসের হার সবচেয়ে কম ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে। এসব বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। 

আরো পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকমে ভর্তি বিজ্ঞাপন দিন ৩০ শতাংশ ছাড়ে

তবে সাধারণ ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেটি শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এবার পাসে হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ তালিকায় ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সবার পেছনে আছে ময়মনসিংহ বোর্ড।  এ ছাড়া বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪, ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৬, কুমিল্লা বোর্ডে ৭১ দশমিক ১৫, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২, যশোর বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।  

এ বছর সব বোর্ড মিলিয়ে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। এদের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী। কারিগরিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন। অবশিষ্ট ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন সাধারণ শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। 

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এ বছরের ফল প্রকাশ করা হয়। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ফলাফলের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

আরো পড়ুন : শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

এবারের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর প্রথমে ১১ আগস্ট ও পরে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে আগস্টে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবারের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। বিষয় ম্যাপিংয়ের জন্য একটি নীতিমালা আছে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। 

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লাস

আরো পড়ুন : দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034260749816895