সাবমেরিন কেবলে আলোকিত তেঁতুলিয়ার বুক চিরে জেগে ওঠা মূলভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চন্দ্রদ্বীপ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পুর্তি উপলক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ পেল এই চন্দ্রদ্বীপের ১৩টি চরের আড়াই হাজার পরিবার।
বুধবার (১৬ জুন) সকালে পটুয়াখালীর বাউফল পৌর সদরের জোনাল অফিস থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া সাবমেরিন কেবলে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত বিদ্যুৎ লাইনের উদ্বোধনে নিংড়ে পড়ছে নিয়ন আলোর উৎসব আমেজ চরবাসীর চোখে-মুখে।
জানা গেছে, মুলভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন রায়সাহেবচর, চরমিয়াজান, চরকচুয়া, চরদিয়ারাকচুয়া, চরনিমদী, পাঁচখাজুরিয়া, কিচমত পাঁচখাজিুরিয়া, চরব্যারেট, চরওয়াডেল ও চরআলগীর মতো ছোটবড় ১১টি চর নিয়ে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে স্বীকৃতি পায় বাউফলের মানচিত্রে চন্দ্রদ্বীপ নামে আলাদা ইউনিয়নের। মোট ৫৫ বর্গমাইল আয়তনের এই ইউপির লোকসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। ৬ টি প্রাইমারি ও ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত একটি হাইস্কুল রয়েছে এই চন্দ্রদ্বীপে। মৎস্য, কৃষি, পর্যটন ও প্রাণীজ সম্পদের বিপুল সম্ভাবনার এই চন্দ্রদ্বীপের বেশিরভাগ মানুষ জেলে ও কৃষক। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পাল্টাতে শুরু করেছে এই চরবাসীর জীবনমান। ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে প্রমত্তা তেঁতুলিয়ার তলদেশ দিয়ে ০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে গ্রিড লাইনে ১০২ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের উদ্বোধন যেন চরবাসীর এক সোনালী স্বপ্লের প্রতিফলন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এই সংযোগ লাইন নির্মাণ কাজের শুরু। শেষ হয় এ বছর মে মাসের দিকে। লাইনে যুক্ত করা হয় ১৫৭টি ট্রান্সমিটার। এই সংযোগ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলোয় জীবনমানের পরিবর্তন ত্বরান্বীত করবে এমনই আশা বিভিন্ন ধরণের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত চরবাসীর।
চন্দ্রদ্বীপের চরব্যারেট এলাকার সেলিম খান নামে একজন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘এই চরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে ধারণারও বাইরে ছিল। এখন আর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য কুপি-হ্যারিকেন জ্বালানো লাগবে না।’
চর নিমদী এলাকার ছালম মৃধার স্ত্রী নুরজাহান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ঘরে বইয়া আগে আগে ঝড়-বইন্যার খবর পামু টেলিভিশনে। আমরা মাইয়া মানুষেও হাঁস-মুরগীর খামার করতে পারমু। কারেন্ট আওনে আমাগো ম্যালা উপুকার অইছে।’
চন্দ্রদ্বীপ ইউপির চর রায়সাহেব এলাকার মেম্বর ছালাম শরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘দূর্গম-দূরত্বের হলেও চন্দ্রদ্বীপ এক সম্ভাবনার নাম। নিরাপত্তা আর জাতীয়ভাবে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা গেলে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীজ খাতের সঙ্গে এখানকার পর্যটন সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিদ্যুতায়নের ফলে নানা কাজের সুযোগ সৃষ্টির মতো চরের দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় একধাপ এগিয়ে গেল। এতে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বীত হবে। এখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর অঙ্গিকার যেন পূর্ণ হলো আজ।’
উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসম ফিরোজ বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুজিব বর্ষে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া সরকারের লক্ষ্য। পদ্মা সেতু ও লেবুখালী সেতু চালু হলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে।’
পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সভাপতি জিএম শাহ মো. রাজ্জাকুর রহমানের সভাপতিত্বে বাউফল জোনাল অফিসের নব নির্মিত অফিস ক্যাম্পাস ও চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন (অফগ্রীড) বিদ্যুতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন খান, বাউফল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বশার তালুকদার, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম মিয়া, ওসি আল মামুনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।