রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘ইডেন মহিলা কলেজ’ আজকের এই ইডেন কলেজ হয়ে উঠতে রয়েছে দীর্ঘ ১৫০ বছরের ইতিহাস। নারীশিক্ষা বিস্তারে দেশের এই অন্যতম কলেজটি ছিলো এক সময়কার বাংলায় মেয়েদের প্রথম স্কুল। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে নারীশিক্ষা বিস্তারে ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য স্কুল হিসেবে ‘শুভসাধিনী সভ’ নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। গভর্নর স্যার অ্যাসলি ইডেনের নামানুসারে এর নতুন নামকরণ হয় ইডেন গার্লস স্কুল। স্যার অ্যাসলি ইডেন ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে দক্ষ ছিলেন। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে গড়ে ওঠা ১৫০ বছরে ইডেনে রয়েছে ২৩টি বিভাগ ও ৪টি অনুষদ। বর্তামানে ৩৪৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে প্রায় ৩৫ হাজার নারী শিক্ষার্থী রয়েছে কলেজটিতে। প্রতিষ্ঠানটির ৬টি ভবন ছাড়াও ৬টি ছাত্রী নিবাস রয়েছে। কলেজটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। কলেজটির ১৫০ বছর পূর্তিতে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ইসরাত জাহান মিশু, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ
কানিছ ফাহিমা, সেশন ২০১২-১৩, সমাজবিজ্ঞান
ইডেন মহিলা কলেজ। দেশে অন্যতম সেরা এক নারী বিদ্যাপীঠ। এটিই ছিলো বাংলায় নারীদের উচ্চশিক্ষার অর্জনের প্রথম মহিলা কলেজ। প্রাণের এ বিদ্যাপিঠ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শরু করে বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত ফিরে তাকাতে হবে। এই বিদ্যাপীঠের কথা উঠতেই সর্বপ্রথম যে মহান নারীর কথা মনে পড়ে তিনি হলেন আমাদের নারী শক্তির বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এ ছাড়া আমাদের দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী,ভাষাসৈনিক অধ্যাপক চেমন আরা, প্রাক্তন শিক্ষক সিদ্দিকা কবিরসহ আরো নামকরা গুণীজন এই বিদ্যাপিঠে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যে নাম লিখা আছে। তারা আমাদের নারীজাগরণে এবং নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম পথিকৃৎ। যা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যেক নারীদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরনা যোগায়।
জেরিন বিনতে আসাদ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং
ইডেন মহিলা কলেজের উৎপত্তি হয়েছিলো ব্রাহ্মণ মেয়েদের জন্য ‘শুভ স্বাধিনি সেবা’ নামে একটি মানব হিতৈষী সংস্থা কর্তৃক ঢাকায় ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুল থেকে। গভর্নর স্যার অ্যাসলি ইডেনের নামানুসারে এর নতুন নামকরণ হয় ইডেন গার্লস স্কুল। স্যার অ্যাসলি ইডেন ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়নশীল কর্মে তার অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের কলেজের নামটি যেমন সকলকে মুগ্ধ করে ঠিক তেমনই শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং বিভিন্নমুখী কল্যাণমূলক কর্মে ইডেনের অবদান সকল ছাত্রীকেই অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
ইডেন মহিলা কলেজ প্রকৃত অর্থেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। আমরা ছাত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠান কিংবা আমাদের কারিগরদের (গুরুজনদের) জন্যে কতোটা করতে পেরেছি জানি না, তবে আমাদের প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত মানুষ করে গড়ে তুলতে আমাদের শিক্ষকরা সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইডেন কলেজে পাঠগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই গর্ববোধ করি। এ বছর আমাদের কলেজের ১৫০ বছর পূর্তিতে আমরা শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত, গর্বিত। এই শুভক্ষণে শিক্ষার্থী হিসেবে, নাগরিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে পৃথিবীর উন্নয়নে ভবিষ্যতে অবদান রাখতে পারলেই তবে ‘ইডেন মহিলা কলেজ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জন্য কিছু করতে পেরেছি বলে ধারণা রাখতে সক্ষম হবো বলে আমি মনে করছি।
তানজিন আক্তার, অর্থনীতি বিভাগ, সেশন ২০১৬ -২০১৭
কলেজটি বাংলাদেশের মধ্যে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এখানে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। উচ্চশিক্ষার জন্য একটি কলেজে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, সবই পেয়েছি এখানে। ইডেন কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে পয়লা বৈশাখ, বসন্তবরণ, পৌষ পার্বণ-এমন সব ধরনের উৎসব ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর ডিসেম্বরে দুই দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে দোকান বসে। ১৫০ বছর ধরে কলেজটিতার সুনাম-খ্যাতি ধরে রেখেছে। এ কলেজের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকি দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করার।
নুসরাত জাহান, ইতিহাস বিভাগ, সেশন ২০২২ -২০২৩
আমি নুসরাত জাহান ইতিহাস বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ২০২২-২০২৩ সেশনের ছাত্রী। আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছি ইডেন কলেজে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে এবং ১৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পেরে। ইডেন কলেজ আমার কাছে একটি স্বপ্নের জায়গা আমি আমার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।
রেহানা রাখী, বাংলা বিভাগ, সেশন ২০১৩-১৪
আমার কাছে ইডেন মহিলা কলেজ সে এক অপার শক্তি, সাহস আর সৌন্দর্যের সম্ভার। ‘ইডেন’ শব্দটির অর্থই হচ্ছে স্বর্গোদ্যান বা নন্দনকানন। এ যেনো রাজধানীর বুকে গড়ে ওঠা বাস্তবিক একটুকরো স্বর্গোদ্যানই। ১৫০ বছর আগের সেই পথচলা আজও রয়েছে অব্যাহত। পরবর্তীকালে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আজকের এই ইডেন মহিলা কলেজ। আজ সেটি বাংলাদেশের জাতি গঠনের কাজে অন্যান্য মহাবিদ্যাপীঠগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে সমান তালে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কলকাকলিতে প্রতিদিন সাজে নতুন করে আমাদের এই স্বর্গোদ্যানটি। নারী উন্নয়নের এই জোয়ারে ইডেন কলেজের ছাত্রীরা বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন সামনের সারিতে। দেশ বা সমাজের প্রয়োজনে এ প্রতিষ্ঠানের সাহসী ও প্রগতিশীল নারীরা এগিয়েছেন সবসময়। আমাদের নারী প্রগতির এই ধারাকে বয়ে নিয়ে চলছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, এ বহমান ধারা অব্যহত থাকুক অনন্তকাল। প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে ১৫০ পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণর সাক্ষী হতে পেরে আমি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত অনুভব করছি। এই দিনটি ইডেন মহিলা কলেজের জীবনে ফিরে আসুক বারংবার।
স্বর্না আক্তার, ইংরেজি বিভাগ, সেশন ২০১৬ -২০১৭
দেশের অন্যতম সেরা এক নারী বিদ্যাপীঠ। এটিই ছিলো বাংলায় নারীদের উচ্চশিক্ষার অর্জনের প্রথম মহিলা কলেজ। এই বিদ্যাপীঠের কথা উঠতেই সর্বপ্রথম যে মহান নারীর কথা মনে পরে যায় তিনি হলেন আমাদের নারী শক্তির বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এ ছাড়া আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হিসেবে কলেজের ১৫০ বছর পূর্তিতে আমার উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
আফসানা সরওয়ার, সহকারী অধ্যাপক, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ
একজন নারী হিসেবে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই সমাজে নারীর অবস্থান, নারী জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা ও নারী শিক্ষা আমাকে দারুনভাবে ভাবিয়েছে। কর্ম জীবনে নারী মুক্তির অগ্রদূত খ্যাত ইডেন মহিলা কলেজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দ প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের অগ্রযাত্রা সহজ ছিলো না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে নারী মুক্তির আলোক বর্তিকা ছড়িয়ে আমাদের সকলের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজ এ বছর গৌরবময় পথ চলার ১৫০ বছরে পদার্পন করছে। এ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কলেজে নিয়োজিত শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী ও কলেজের প্রাণ প্রদীপ শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অসামান্য অবদানে কলেজটি আজ নিজ মহিমায় উদ্ভাসিত। প্রতিষ্ঠানটির গণ্ডি কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদানেই সীমবদ্ধ নয় বরং তার পরিধি বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী। সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা সুপ্রতিষ্ঠিত করাই তার লক্ষ্য। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আশাকরি এ প্রতিষ্ঠানটি সামনের দিনগুলোতেও নারী সমাজের উন্নয়নে আরো জড়ালো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সঞ্জিতা নাসরীন, শিক্ষক, গণিত বিভাগ
এক দুদিন করে কখন যে চলে গেছে সাতটি বছর। বট, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, ঘাসফুল, কলাবতী আর পুকুরের স্বচ্ছ পানির নিচে নিজের ছায়া সবকিছু যেনো হৃদয়ের গহীনে ভালোবাসায় মোড়ানো রত্ন রাজি। আমাদের সময়টা ছিলো সত্যিকার অর্ধেই সোনালী সুতোয় গাঁথা মালা। কারণ, তখনো প্রযুক্তি আমাদের গ্রাস করেনি। যেমন হৈ হৈ করে বন্ধুরা মিলে ক্লাসে যেতাম তেমনি ক্লাস শেষে করে বুড়ো বট গাছের বাঁধানো চত্বরে পা ঝুলিয়ে বসে চটপটি খেতাম। যেদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে লক্ষ্য স্মৃতি পেছনে ফেলে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিলো আমার সঙ্গেই ইডেনের আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা ধূলিকণাও বুঝি মন খারাপ করছে। কখনো কি ফেরা হবে আর! যেদিন শিক্ষক হয়ে পা রাখলাম চিরচেনা ইডেনে মনে হলো যেনো আবারো স্বর্গে ফিরে এলাম।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।