সিকৃবিতে ছিদ্দিকুলের ‌ভিসিগিড়ি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিলেট |

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ডিন মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দায়িত্ব পেয়েই তিনি শুরু করছেন ‘ভিসিগিরি’। শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত ভিসির পদায়ন করা সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সরিয়ে সব আর্থিক ও প্রশাসনিক পদে বসিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের। বিধিবহির্ভূতভাবে আজ বুধবার ডেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভাও। ছিদ্দিকুল ইসলাম ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক, ভেটেরিনারি অ্যানিমেল ও বায়োমেডিকেল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও বিএনপিপন্থী সাদা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। 

 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরদিন সিকৃবি ভিসি মো. জামাল উদ্দিন ভূঞাকে পদত্যাগের চাপ দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপে পদত্যাগে রাজি না হলে ভিসিকে জোরপূর্বক ১০ দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যান।

ছুটি শেষ হলে তাঁকে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জামাল উদ্দিন ভূঞা। একই দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে ‌‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতিকালীন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলে আলোচনাক্রমে একজন ডিনকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো।’ ওই দিনই ডিন কাউন্সিল মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়।

সাময়িক আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে ছিদ্দিকুল ইসলাম বসে যান ভিসির চেয়ারে। আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে বসিয়ে দেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের। এমনকি চিঠিপত্রে নিজেকে ভিসি হিসেবে উল্লেখ করছেন। অথচ তাঁকে কোনো কর্তৃপক্ষ ভিসি পদে নিয়োগ দেয়নি। ২২ আগস্ট ভিসির ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলামকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সংযুক্ত করেন। পাশাপাশি কৌলীতত্ত্ব ও প্রাণী প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমানকে রেজিস্ট্রারের (অ. দা.) দায়িত্ব দেন। এই আদেশে লেখা হয়, ‘ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম, ভাইস চ্যান্সেলর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।’ একইভাবে একই দিন পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) অধ্যাপক ড. এ টি এম মাহবুব-ই-ইলাহী, পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল, সহযোগী পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার, পরিচালক (আইকিউএসি) অধ্যাপক ড. এম রাশেদ হাসনাত, পরিচালক (ফার্ম) অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ, পরিচালক (পরিবহন শাখা) অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক, পরিচালক (প্রফেসর মছলেহ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল) অধ্যাপক ড. মো. মুক্তার হোসেন, আব্দুস সামাদ আজাদ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা, হজরত শাহপরাণ (র.) হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আজিজ, সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহানা বেগম, অডিটরিয়াম ইনচার্জ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পিএস টু ভিসি মোহাম্মদ নেয়ামত উল্যাহ, নিরাপত্তা কর্মকর্তা (অ. দা.) আশফাক আহমেদ দায়িত্ব দেন। তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মাহবুব-ই-ইলাহী ও অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ শুধু জামায়াতপন্থী। তাঁরা দুজনই আবার একই বিভাগের। বাকি সবাই বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষক। নেয়ামত ও আশফাক দুজনই বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা।

অধ্যাপক মো. ছিদ্দিকুল ইসলামের অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উনাকে তো ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আর যেসব পদে লোক আছে, সেগুলোতে সাদা দলের সবাইকে ঢালাওভাবে দায়িত্ব দেওয়ার কী যুক্তি আছে? একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। আশা করব, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেবেন।’

জানতে চাইলে পদাধিকারবলে সিকৃবি সিন্ডিকেট সদস্য ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবু আহমদ ছিদ্দীকীবলেন, ‘উনি আমাকে বলেছেন, উনাকে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভার্চুয়ালি (সভায়) যোগ দেব বলে জানিয়েছিলাম। ভালো হয়েছে আপনি আমাকে অবগত করায়।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘চিঠিতে স্পষ্ট পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভিসির দায়িত্ব নয়, একজন ডিন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুপস্থিতিকালীন আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025520324707031