সিকৃবিতে ২২ পদের বিপরীতে ২৯ শিক্ষক নিয়োগ, মেধাবীদের অবমূল্যায়ন

সিকৃবি প্রতিনিধি |

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম যেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষের নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। রেজিস্ট্রারসহ একাধিক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এবার ২২ পদের বিপরীতে ২৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত সাতজনের নিয়োগের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানসহ নিয়োগ বোর্ডের অন্য সদস্যরা কিছুই জানেন না। ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এসব নিয়োগ দেওয়া হয়। অধিকাংশ সদস্যের আপত্তি উপেক্ষা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, নিয়মবহির্ভূত নিয়োগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিক সিজিপিএ প্রাপ্ত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কম সিজিপিএ প্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত মেধাবী প্রার্থীকেও মূল্যায়ন করা হয়নি।

যুগোপযোগী শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করতে নীতিমালায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন থেকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে।

সিকৃবি কর্তৃপক্ষের এমন অপকর্মের প্রতিবাদ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ। ৪৫ জন শিক্ষক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি ১৭ জানুয়ারি হাতে এসেছে। স্মারকলিপিতে জানানো হয়, এসব বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় কথা বলার চেষ্টা করলে সদস্যদের মাইক্রোফোন মিউট (শব্দহীন করা) করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দফতরে গিয়ে তাকে পাননি পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

কথা বলার জন্য সময় চেয়ে তারা ফোন করলেও উপাচার্য সময় দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে কথা বলার জন্য সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় তারা কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন বলেও জানান।

মঙ্গলবার বিকালে গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আতিকুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিষয়গুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই এসব বিষয়ে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি।

আমাদের সঙ্গে তার পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আমাদের নির্ধারিত সময়ও অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন আমরা বসে পরবর্তী কর্মসূচি ও করণীয় ঠিক করব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ ধ্বংস হতে দেব না।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি বিভাগে সাতটি প্রভাষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিকৃবি। এরপর ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ১৫টি বিভাগে ১৫টি প্রভাষক পদ, চারটি বিভাগে চারটি প্রফেসর পদ ও একটি বিভাগে একটি সহযোগী প্রফেসর পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

দুই বিজ্ঞপ্তিতে ২২টি পদে নিয়োগের কথা থাকলেও সিকৃবি কর্তৃপক্ষ অ্যানাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে একজনের জায়গায় তিনজন, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগে একজনের জায়গায় তিনজন, এগ্রিকালচারাল কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দুইজনের জায়গায় তিনজন, কৃষি বিপণন ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন, একোয়াকালচার বিভাগে একজনের জায়গায় দুইজন নিয়োগ করা হয়েছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী খুশনুদ তাবাবসুম খেয়াকে নেওয়া হয়নি। প্যারাসাইটোলজি বিভাগে ৩.৭৫ সিজিপিএধারী ইভা সাহা ও ৩.৭৪ সিজিপিএধারী মোহাম্মদ হোসেনকে বাদ দিয়ে ৩.৬২ সিজিপিএধারী সাইফুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাইফুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার প্রার্থী ছিলেন। সার্জারি ও থেরিওজেনোলজিতে বিভাগে ৩.৮১ ও ৩.৬২ সিজিপিএ ধারী দুইজন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ৩.৫১ সিজিপিএধারী এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রার্থী যথাসময়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করতেও ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে উপাচার্যের কাছ থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ওই প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভাংচুর মামলার আসামিও ছিলেন। ভাংচুরের সময় প্যাথলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক আল মামুনের চেম্বার কম্পিউটারসহ নগদ টাকা লুট করেন।

জানা গেছে, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ দেবনাথ একজনের নিয়োগের জন্য বোর্ডে স্বাক্ষর দিয়ে এলেও পরে ভিসি আরও দুইজনের নাম যোগ করেন। ওই বিভাগের এক শিক্ষক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আর যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের কোনো ধরনের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে যোগদান করানো হয়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে- নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্তদের ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার পর যোগদান করানোর।

এসব বিষয়ে জানতে সিকৃবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান হাওলাদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্য জানার জন্য খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।

তার ব্যক্তিগত সহকারী ফখর উদ্দিন জানান, উপাচার্য জরুরি কাজে ঢাকায় আছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলাম বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। স্মারকলিপিও দেখেননি। যদিও স্মারকলিপিটি তার মাধ্যমে উপাচার্য বরাবরে দেওয়া হয়েছে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056159496307373