সিলেট শহরে কোমরসমান পানি, আতঙ্কে মানুষ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিলেট |

ঘরে কোমরসমান পানি উঠেছে। এখনো বাড়ছে পানি। এমন পরিস্থিতিতে চোখে–মুখে আতঙ্ক নিয়ে ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন আকবর আলী ও তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট নগরের উপশহর এলাকায় তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়। আকবর আলী বলেন, গত সোমবার রাতে তাঁর ঘরে পানি আসতে শুরু করে। মুহূর্তেই হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। দুই দিনের ব্যবধানে পানি বেড়ে হয়েছে কোমরসমান। পানি বাড়ার আশঙ্কায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

ভারী বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমবার থেকে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সিলেটে বন্যা হয়েছিল, সেটি ৮ জুনের পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রথম দফার রেশ না কাটতেই দ্বিতীয় দফায় সিলেট নগরসহ সব কটি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

আজ সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সিলেট নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপশহর, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ এলাকাসহ নিচু এলাকার অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পরিচিতজন কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে যাচ্ছে। অনেকে ঘরে কয়েক স্তরে ইট ফেলে সেখানে খাট তুলে কোনোরকমে আছে। 

সকাল নয়টার দিকে মাছুদিঘিরপার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তালতলা এলাকামুখী মূল সড়কে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। সড়কটিতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে একটা লম্বা আকৃতির বাঁশ আড়াআড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোতে মানুষজনের চলাচল ছিল কম। তবে অফিসগামী মানুষেরা পানি মাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। নগরের শামীমাবাদ, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজার, তোপখানা, কাজিরবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, যতরপুর, তেরোরতন ও উপশহর এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। অনেক বাসা, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে আছে।

সকাল ১০টার দিকে নগরের অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহজালাল উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোজভিউ হোটেলের সামনে দিয়ে উপশহরমুখী রাস্তায় ঘোলা পানি থই থই করছে। সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি। জমে থাকা পানিতে ভাসছে বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা। এ পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচল করছে। পানিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল করছে। রাস্তা ও নালা-নর্দমা একাকার হয়ে যাওয়ায় অনেক যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

উপশহর এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁর দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে অনেক পণ্য ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হয়ে পড়েছে। তাঁর মতো এলাকার অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের বাসার চুলা-নলকূপ ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী পারুল আক্তার (৩৯) বলেন, তাঁর ঘরের ভেতরে হাঁটুসমান পানি। ঘরের চুলা ডুবে গেছে। জরুরি জিনিসপত্র তিনি খাটসহ উঁচু স্থানে রাখছেন। তবে অনেক জিনিস নষ্টও হয়েছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় দৈনন্দিন কাজকর্মও করা যাচ্ছে না। পানি আরেকটু বাড়লে বাসা ছাড়তে হবে।

বন্যাকবলিত এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোকানে পানি ঢুকে পড়ায় প্লাবিত এলাকাগুলোয় কয়েক শ দোকান বন্ধ আছে। দোকানের মালামাল নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন।

ভুক্তভোগী নগরবাসীর কয়েকজন জানিয়েছেন, অনেক বাসাবাড়ির চুলা পানির নিচে। মানুষের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। এ ছাড়া পানিবন্দী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রসূতি ও নারীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। যেসব এলাকার রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে, সেসব এলাকায় রিকশাচালকেরা যাত্রী পরিবহনে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন। এ ছাড়া বানের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে ময়লা-আবর্জনা। এসব পানি থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২২টি ওয়ার্ডের অন্তত ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন। এ ছাড়া বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় সিটি কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003277063369751