দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৫৭০টি 'নম্বরপত্র ব্যাকগ্রাউন্ড' (সনদ তৈরির বিশেষ কাগজ) 'হারানো' এবং সিস্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে ৫ হাজার পিস বিশেষ কাগজ চুরির প্রমাণ পেয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। ২০২১ ও ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জনিয়ারিং ডিপ্লোমা-ইন-ট্যুরিজম পরীক্ষার বিশেষ কাগজ 'হারানোর' প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোর্ডের গোপনীয় শাখা অর্থাৎ 'কম্পিউটার সেলে' চেইন অব কমান্ড নেই বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যান্য শাখার নথিপত্রেও 'ঘষামাঝা' ও নথি সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দে রাতের বেলা বোর্ডের সিস্টেম এনালিট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে বোর্ডের 'কম্পিউটার সেলে' একা প্রবেশ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই রাতে তিনি পাঁচ হাজার 'ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার' বা বিশেষ কাগজের একটি বান্ডিল চুরি করেন। এই কাগজ দিয়ে তিনি সনদ তৈরি করতেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
তার বিরুদ্ধে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দেও 'শর্ট কোর্সের' সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। এরপরও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে শামসুজ্জামানকে একই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।
২০২১ ও ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদের টি হিসেবে 'গরমিল' থাকতে পারে । মন্তব্য করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা না হয়ছে, 'সামগ্রিকভাবে, বোর্ডের না কম্পিউটার সেলসহ বিভিন্ন শাখার। মধ্যে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা (চেইন অব এ কমান্ড) এর দুর্বলতা, দৈনিক হাজিরা ন ভিত্তিক কর্মচারীর দায়বদ্ধতাগত অগ্রহণযোগ্যতা এবং এ সুযোগে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড হারানো
সংক্রান্ত নাক্কারজনক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে, যা অতীব দুঃখজনক।' কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের
চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন উল হক সম্প্রতি বলেছেন, সব জাল সনদ চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। আর বোর্ডের যেসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে এই ঘটনায় সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সনদ জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সনদ জালিয়াতির ঘটনায় বোর্ডের ৫২ জন অস্থায়ী কর্মচারীকে রদবদলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ওইসব কর্মচারীকে বদলি করা হচ্ছে। ৮ দফা সুপারিশ
সনদ জালিয়াতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে আট দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
১. হারানো ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার উদ্ধার ও অনৈতিক ব্যবহারের বিষয়ে ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।
২. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ রাতের অন্ধকারে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যেই একাকী কম্পিউটার সেলে প্রবেশ করেন এবং এক বান্ডিল ও কিছু খোলা ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার প্রিন্টিং কক্ষ হতে নিজের বসার কক্ষে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।
৩. ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার সংক্রান্ত কাউন্টিং ও চাহিদাপত্রে, নথিতে ও রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট স্থানে কাটাকাটি, স্বাক্ষর না দেয়া, তারিখ সংক্রান্ত ঘষামাজার বিষয়ে বিশারদের ফরেনসিক হস্তলেখা তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।
৪. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রকিউরমেন্ট শাখার, সনদ শাখা, কম্পিউটার সেলে আবশ্যিকভাবে রেজিস্টার পরিচালনা ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর এবং নাম ও পদবি সম্বলিত সিল ব্যবহার করে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করা হলো।
৫. সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য বোর্ডের স্টোরে, সনদ শাখায় ও কম্পিউটার সেলে নিরাপত্তা সম্বলিত ভল্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।
৬. শিক্ষার্থীর তথ্যাদি অনলাইনে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি তা হার্ড কপিতে মুদ্রণ ও বাঁধাই করে একাধিক দপ্তরে বা শাখায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
৭. আবশ্যিকভাবে বোর্ডের স্পর্শকাতর শাখায় দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারী প্রত্যাহার এবং অন্যান্য শাখায় কর্মরত এ ধরনের কর্মচারীর আনাগোনা বন্ধ করতে হবে।
৮. বোর্ড অনুমোদিত ৩৪টি শিক্ষাক্রমের ফলাফল প্রকাশের পর সনদপত্র ও নম্বরপত্র প্রস্তুতকরণ,পদবি নেই বিধায় তা বাংলাদেশ একটি সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪ ক্রিয়া অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়নি। সংশ্লিষ্টপত্রে কম্পিউটার সেলের শাখা প্রধান হিসেবে তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্টের কোনো স্বাক্ষর নেই বলে ( করণ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে
সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ণের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অসংখ্য সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ শিটে ঘটনায় বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্টকে ষ্টতা সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে একটি গোয়েন্দা ওয়া সংস্থা। এ ঘটনায় বোর্ডের চেয়ারম্যান উিন্ড আকবর আলী খানকে পদ থেকে বে' সরিয়ে দেয়া হয় এবং তার স্ত্রীকে নো গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন পর তার স্ত্রী - ও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।