সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, বেড়েছে আমানত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক-গুলোতে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ থাকার হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল প্রকাশিত এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে রয়েছে ৫৭ কোটি ৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ৯৫ টাকা ধরে) যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ছিল ৬১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ফলে আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থ কিছুটা কমেছে। তবে বাংলাদেশি গ্রাহকের নামে থাকা আমানত অনেক বেড়েছে।

সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যান সম্পর্কে বলেছে, এসব পরিসংখ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত গ্রাহকের তথ্যের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রাখা হবে। গোপনীয়তার স্বার্থে সব ডাটা সমন্বিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহকের তথ্য নেই।

এসএনবির বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যানে সে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশের নামে পাওনা ও দায়ের তথ্য রয়েছে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশের নামে সে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট যে দায় রয়েছে, তার মধ্যে ৫৩ কোটি ফ্রাঁ এ দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে। অন্যদিকে গ্রাহক আমানত রয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০০ কোটি টাকার সামান্য বেশি। আগের বছর গ্রাহকের আমানত ছিল প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। এর বাইরে সম্পদ ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে আরও ৭৫ লাখ ফ্রাঁ বিনিয়োগ হিসেবে রয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল এক কোটি ফ্রাঁ।

বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রেখে থাকে, তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।

প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের পাওনার তথ্যও রয়েছে, যা সে দেশের 'সম্পদ' হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের পাওনা ৩৩ কোটি ফ্রাঁ বা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে তাদের পাওনা ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ফ্রাঁ বা প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশি গ্রাহকদের সুইস ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে চার কোটি ৭০ লাখ ফ্রাঁ বা প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থায় এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর পাওনা পাঁচ হাজার ৮০২ কোটি ডলার। সুইস ব্যাংকে ভারত ও পাকিস্তানের অর্থ আগের বছরের চেয়ে ২০২০ সালে বেড়েছে। ভারতের নামে রয়েছে ২৫৫ কোটি ফ্রাঁ, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮৯ কোটি ফ্রাঁ। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে দায় ৬৪ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৩৬ কোটি ফ্রাঁ।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের বেশিরভাগই বৈদেশিক বাণিজ্যকেন্দ্রিক। গ্রাহকের আমানত হিসাবে যে অর্থ থাকে, তার মধ্যে সুইজারল্যান্ডে এবং অন্যান্য দেশে যেসব বাংলাদেশি থাকেন, তাদের অর্থও রয়েছে। গ্রাহক আমানতের একটি অংশ পাচার হয়ে যেতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়। বিএফআইইউর কাছে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এর আগে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সংবলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি। সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে- এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক, অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেন, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা মূলত সে দেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক সম্পদ ও দায়ের অর্থ। এ থেকে বাংলাদেশসহ কোনো দেশের অর্থ পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। তবে এটা ঠিক, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক ব্যবস্থায় অনেকে গোপনে সম্পদ রাখেন। ব্যাংকের বাইরে বাড়ি বা অন্য স্থাবর সম্পত্তিতেও কারও বিনিয়োগ থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যারা অর্থ পাচার করেন, তারা বিভিন্ন দেশে প্রধানত সম্পদ কেনেন অথবা বিনিয়োগ করেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি বাণিজ্যের আড়ালে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়, তার প্রাক্কলন করে। জিএফআই গত বছরের মার্চে এ বিষয়ে তাদের সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জিএফআইর প্রাক্কলন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে গত ১০ বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়।

কয়েক বছর ধরে সুইস ব্যাংকে টাকার পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে জানান, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে যে লেনদেন হয়, তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং এ অর্থ পাচার নয়। তবে কিছু অর্থ পাচার হয়। বাংলাদেশ থেকে যে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের অর্থ পাচার হয়, তা সরকারও বিভিন্ন সময়ে স্বীকার করেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থ পাচার বিষয়ে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা সংযোজন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং করে পাচার করা হয়েছে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া হিসেব প্রমাণিত হবে তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। টাকা পাচার ইস্যুতে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। তারা দাবি করেন, অর্থ পাচার ঠেকানো এবং ফেরত আনার ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0064120292663574