সেই অধ্যাপকের নিরাপত্তা চান ৫৩ শিক্ষক

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অপমানের অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের এক নেতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা দাবি করেছে সংগঠনটি।  

সোমবার সংগঠনটির ৫৩ জন শিক্ষক যৌথ বিবৃতিতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ‘সংবেদনশীলতার সঙ্গে’ পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। ছবি : সংগৃহীত

‘অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই’ শিরোনামে বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান ধ্রুবর আত্মহত্যা চেষ্টা ও শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানকে এর জন্য দায়ী করে আবর্তিত ঘটনা আমরা গত কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। পুরো বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নীরবতাও পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।

বিবৃতিটি আরো বলা হয়, সম্প্রতি শিক্ষার্থী ধ্রুব স্বপ্রণোদিতভাবে অধ্যাপক তানজীমের কাছে গিয়ে এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে চারিত্রিক কলঙ্কারোপ করার চেষ্টা করে। তানজীম তার কাছে সে সংক্রান্ত প্রমাণ চান। ধ্রুব যথাযথ প্রমাণ হাজির না করে অন্যান্য সহপাঠীদের সাক্ষী মানেন। পরে গত ২ মার্চ ক্লাসে তানজীম ধ্রুবকে দাঁড় করিয়ে সহপাঠীদের নাম জানাতে বলেন। ধ্রুব নাম জানাতে রাজি না হলে তানজীম তাকে এ ধরনের গুজব ছড়ানোর বন্ধ করতে ও সহপাঠীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে বারণ করেন।

সেই দিনের ঘটনা টেনে বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, ক্লাস থেকে বের হয়ে অধ্যাপক তানজীমের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেও ধ্রুব ক্লাসের সবার সামনে তাকে ‘অপমান’ করার জন্য তানজীমকে অভিযুক্ত করেন। তিনি হুমকি দেন যে যদি তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেবেন, তার জন্য অধ্যাপক তানজীমই দায়ী থাকবেন। এরপর তানজীমউদ্দিন তাকে নানাভাবে বোঝান যেন তিনি ওরকম কিছু না করেন। এরপরও ধ্রুব ফেসবুক স্ট্যাটাসে সুইসাইড নোট লেখেন এবং আত্মহননের সিদ্ধান্তের পেছনে অধ্যাপক তানজীমকেই দায়ী করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ার কারণেই নাকি অধ্যাপক তানজীম তার প্রতি বিরূপ হয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পর, অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধার করা হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এখন শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন এবং চূড়ান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শেষ অব্দি ঘটেনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ধ্রুবর ফেসবুকের বক্তব্যের কারণে ক্যাম্পাসে বিভ্রান্তি ছড়ায়। ছাত্রলীগের কিছু সদস্য মধ্যরাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে ধ্রুবর পরিস্থিতির জন্য শিক্ষক তানজীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন। গণমাধ্যমে দেয়া কোনো কোনো ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে কারো কারো পোস্টের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হুমকি ছড়িয়ে পড়ে। আমরা মনে করি, পুরো ঘটনায় অধ্যাপক তানজীমের যে ভূমিকা, তা যথাযথ ছিলো এবং একজন সচেতন শিক্ষকের দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন। 

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একজন নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধ করতে একজন সচেতন শিক্ষকের যা করা প্রয়োজন তিনি ঠিক সে কাজটিই করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিবৃতিতে ও বর্ণনায়ও অধ্যাপক তানজীমের ভূমিকাটি সঠিক ছিলো বলেই প্রতিভাত হয়েছে। অধ্যাপক তানজীমের বক্তব্যে আমরা জেনেছি যে ধ্রুবর ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিলো না। বরং ধ্রুবই তার এই পরিচয়কে তার ইমেইলে সামনে আনেন এবং ঘটনাটিতে তার রাঙানো রাজনৈতিক পরিচয়ের জের ধরেই ছাত্রলীগের সদস্যরা অধ্যাপক তানজীমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এখন প্রশ্ন হলো একজন শিক্ষার্থী কেন তার শিক্ষককে জড়িয়ে এমন একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটালেন? এর জবাব খুঁজতে আমাদের একটু আগের ঘটনা টেনে আনতে হবে। নানান সূত্রে জানা গেছে, ধ্রুব যার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছিলেন, সেই মেয়েটির কাছে তিনি অতীতে প্রেমপ্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এবং তিনি এই ঘটনার আগে মেয়েটির বিরুদ্ধে আন্তঃব্যক্তিক পর্যায়ে ও সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা ছড়িয়েছেন, যাকে পরিকল্পিত বাচিক নিপীড়ন হিসেবে দেখতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের সমস্যা নিরসনে শিক্ষকদের ন্যায়ের পক্ষেই অবস্থান নিতে হয়। অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান সকলের সামনে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে উদ্যোগ নিয়ে ঠিক কাজটিই করেছেন। এই চেষ্টাকে কোনোভাবেই ‘র‍্যাগিং’ বলা চলে না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে শিক্ষকের এটাই যথোপযুক্ত আচরণ।

এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা ওই নারী শিক্ষার্থীর ওপর বাচিক ও মানসিক নিপীড়নের জন্য ধ্রুবর শাস্তি দাবি করেন এবং অধ্যাপক তানজীমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আত্মহত্যার চেষ্টা করা শিক্ষার্থীর মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উদ্যোগ নেয়ার জন্যও বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এর পাশাপাশি বিবৃতিতে ওই নারী শিক্ষার্থীর আনা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিও করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061230659484863