সেই গৌর মন্ডল এবার সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের সভাপতি হতে চান!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্তিতে জালিয়াতির দায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শাস্তির জন্য নির্ধারিত সরকারি হাইস্কেুলের সেই শিক্ষক গৌর চন্দ্র মণ্ডল এবার সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি পদপ্রার্থী। আজ ২৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এই নির্বাচনের একটি প্যানেলে গৌর চন্দ্র সভাপতি পদে আর ফজুলর রহমান ভুটান সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন। আর এই প্যানেলের অপারপর কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।

জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক থাকাকালে জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হয় একাধিক তদন্তে। গৌরর অপর সহযোগীরা কয়েকটি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কয়েকটি বেসরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। গৌরর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বিভাগীয় মামলা দায়ের করার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত যুবলীগের একজন নেতার তদবিরে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না বলে জানা যায়।  ওই যুবলীগ নেতার বাড়ী গোপালগন্জে। 

অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানার চেষ্টা করেও গৌরকে পাওয়া যায়নি। স্কুল থেকে জানানো হয়, স্যার নির্বাচনের জন্য বাইরে আছেন। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ধানমন্ডি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ফিডার শাখার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ ভর্তি করায় স্থানীয় এমপি ফজলে নূর তাপস গৌরর বিরুদ্ধে নালিশ দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে। এরপর গৌরর বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করে আধা সরকারি পত্রও দেন সাংসদ তাপস। গৌরকে শুধু মানিকগঞ্জ এস কে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। কয়েক বছর পর গৌর যুবলীগের একজন নেতার মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। এরপর শুরু হয় শত শত অবৈধ এমপিওর ঘটনা। এবারও তদন্তে প্রমাণিত হয় গৌর অপরাধ। কিন্তু তাকে শুধু বদলি করা হয় ঢাকা তেজগাও এলাকার একটি সরকারি স্কুলে। 

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক থাকাকালে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখুন: 

জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বেসরকারি কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের ৬ প্রভাষক। এই জালিয়াতিতে নাটের গুরু ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক গৌর চন্দ্র মন্ডল।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয় এমপিওভুক্ত না হলেও ওই ছয় শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গৌর মন্ডল তাদেরকে এমপিওভুক্ত করেছেন। গৌড়র সহযোগী ছিলেন কয়েকজন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার।

ছয় প্রভাষক হলেন গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর বঙ্গরত্ন ডিগ্রি কলেজের অজিত কুমার মন্ডল ও কোটালিপাড়া নেছার উদ্দিন কলেজের নিমচাঁদ হাওলাদার, নেত্রকোনা পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজের জাফরিন সুলতানা ও পূর্বধলা হাফেজ জিয়াউর রহমান কলেজের নাদিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা তালার পাটিকেল ঘাটা এইচ আর কলেজের পলাশ ঘোষ এবং নোয়াখালী সুধারামের চরমটুয়া কলেজের মাজেদুল ইসলাম।

এদিকে, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা বিষয়ের দীর্ঘদিন ধরে এমপিও বঞ্চিত কিছু শিক্ষকের অভিযোগের ভিত্তিতে টনক নড়ে মন্ত্রণালয়ের।

ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুসরাত জাবীন বানু স্বাক্ষরিত এক আদেশে মাউশিকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। মাউশিকে এ বিষয়ে সারাদেশে ওই দুই বিষয়ে কর্মরত প্রভাষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত প্রদান করতে বলেছে। একইসাথে ওই ছয় প্রভাষকের এমপিওভুক্ত করণের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছে।

জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন এবং ফিন্যান্স, ব্যাংকিং ও বিমা পরিষদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ দেয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক গৌড় চন্দ্র মন্ডল এমপিওভুক্তিতে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘এমপিও বাতিলের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভুলক্রমে এমপিওভুক্তি হয়েছে।’

এমপিওভুক্তির মূল দায়িত্বে থাকা মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. এলিয়াছ মনে করেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জালিয়াতি করার সুযোগ নেই এবং বিষয়টি তিনি কয়েকজনকে বুবিয়েছেন।

দেড় বছর আগে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক এলিয়াছ হঠাৎ করেই মাগুরার একটি সরকারি কলেজ থেকে তদবির করে মাউশির এত গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক পদে বাগিয়ে নেন। এই পদে যোগদানের আগে তিনি এমপিও শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। গত সাড়ে তিন বছরে শুধু এমপিও দুর্নীতিই হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারি তদন্তেও এমপিও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক  অধ্যাপক ড. শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না। শিগগিরই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025928020477295