সৈয়দ মুজতবা আলীর মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী’র আজ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল সিলেট জেলার করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার পৈতৃক নিবাস ছিলো হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। তার পিতা সৈয়দ সিকন্দর আলী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। চাকরিসূত্রে পিতার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের পর মুজতবা আলী শেষপর্যন্ত  শান্তিনিকেতন-এ ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্বভারতীতে তিনি বহু ভাষা শেখার সুযোগ পান।  বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ফরমিকির অধীনে তিনি সংস্কৃত ভাষা, সাংখ্য ও বেদান্ত অধ্যয়ন করেন; ড. মার্ক কলিন্স ও মরিসের নিকট ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান, বগদানফের নিকট ফারসি ও আরবি এবং তুচ্চির নিকট ইতালিয়ান শেখেন। এ সময় তিনি হিন্দি ও গুজরাটি ভাষাও শেখেন। বাল্যকালে পারিবারিক সূত্রে উর্দুর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে।

ভারতের অন্যত্র বিশ্বভারতীর ডিগ্রি স্বীকৃত না হওয়ায় মুজতবা আলী প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রবেশিকা পাস করে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘হুমবল্ট’ বৃত্তি নিয়ে তিনি জার্মানি গিয়ে বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি দর্শন বিভাগে তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে গবেষণা করে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ডি ফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৩৪-৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

মুজতবা আলী কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার প্রভাষক হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন। বরোদার মহারাজ সয়াজী রাও-এর আমন্ত্রণে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হন। তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে খন্ডকালীন প্রভাষক হিসেবেও কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। পরে পেশা পরিবর্তন করে মুজতবা আলী ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের সচিব ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মকর্তা হন। সবশেষে তিনি বিশ্বভারতীর ইসলামের ইতিহাস বিভাগে রীডার হিসেবে যোগদান করে সেখান থেকেই ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন

শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালে হস্তলিখিত বিশ্বভারতী পত্রিকায় তার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি সত্যপীর, রায়পিথোরা, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ইত্যাদি ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখতেন। এছাড়া  মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি, কালান্তর, আল-ইসলাহ্  প্রভৃতি সাময়িক পত্রেরও তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন।

গ্রন্থাকারে তার মোট ত্রিশটি উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ভ্রমণকাহিনী দেশে-বিদেশে, জলে-ডাঙায়; উপন্যাস অবিশ্বাস্য, শবনম, শহ্র-ইয়ার; রম্যরচনা পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকণ্ঠী এবং ছোটগল্প চাচা-কাহিনী, টুনি মেম। মুজতবা আলীর ডি.ফিল অভিসন্দর্ভ The Origin of Khojahs and Their Religious Life Today বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। তার আরেকটি অনবদ্য গ্রন্থ পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।

সৈয়দ মুজতবা আলী দেশে-বিদেশে গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে প্রথম প্রবেশ ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। গ্রন্থখানি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পাঠকচিত্ত জয় করতে সক্ষম হন। কাবুলে অবস্থানের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও  অন্তরঙ্গ উপলব্ধির ফসল এই গ্রন্থখানি। সামগ্রিকভাবে তিনি উভয় বঙ্গে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত লেখক ছিলেন। আন্তর্জাতিক চেতনায় সমৃদ্ধ এই লেখকের বিশ্বমানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং অননুকরণীয় রচনাশৈলী তাকে এই সম্মানের অধিকারী করেছে। তদুপরি তিনি যে নৈপুণ্যের সঙ্গে বিদেশি চরিত্র ও আবহ বাংলা সাহিত্যে এনেছেন তাও তুলনাহীন। হালকা মেজাজে আড্ডার ঢঙে বলে গেলেও তার অধিকাংশ রচনা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, শাস্ত্রচর্চা ও বিচার-সমালোচনায় পরিপূর্ণ।

মুজতবা আলী বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন করেছেন এবং বহুজনের সান্নিধ্য লাভ করেছেন। তাই তার লেখায় অনুরূপ বহুদর্শিতা ও নিবিড় অনুধ্যানের প্রতিফলন ঘটেছে। তার রম্যরচনাবিষয়ক ছোট ছোট রচনা পাঠকদের চিত্তবিনোদন ও অনাবিল আনন্দদানে সমর্থ হয়েছে। আবার এ কথাও ঠিক যে, তিনি হাসির আবরণে অনেক সময় হৃদয়ের গভীরতর সত্যকে উদঘাটন ও প্রকাশ করেছেন। তিনি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিবিধ ভাষা ও শাস্ত্র থেকে এসব উপাদান আহরণ করেন। বিশেষ করে উপন্যাস ও ছোটগল্পে মানবজীবনের অন্তহীন দুঃখ-বেদনা ও অপূর্ণতার কথা তিনি সহানুভূতির সঙ্গে চিত্রিত করেছেন। তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030910968780518