দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: তীব্র দাবদাহের মধ্যে সরকারের স্কুল খোলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, রাস্তাঘাট এত উত্তপ্ত যে মানুষ কম বের হচ্ছে। এর মধ্যেই স্কুল-কলেজ শনিবারেও খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ ওই বাচ্চা, ওই কিশোরদেরও এ সরকার আগুনের মধ্যে পুড়িয়ে মারতে চাচ্ছে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ফকিরাপুল বাজারে বিএনপির উদ্যোগে প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষের মাঝে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তীব্র দাবদাহে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করে দলটি।
রিজভী বলেন, আমরা দেশ স্বাধীনের আগেও গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতাম। অথচ এই সরকার রমজান মাস একটি ইবাদতের মাস, সেই মাসেও ১৫ দিন স্কুল খোলা রেখেছিল। যেখানে স্কুল সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ, তার মধ্যে শনিবারে খোলা রাখা হচ্ছে। তপ্ত দ্রহে যেখানে সারা বাংলাদেশ অগ্নিবর্ণ হয়ে উঠেছে, সেই আগুনরাঙা বাংলাদেশের মধ্যে এই বাচ্চাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একটা গণদুশমন সরকার না হলে এটা করত না। একটা গণবিরোধী সরকার না হলে এই নীতি গ্রহণ করত না।
তিনি বলেন, দেশে এখন উত্তপ্ত আগুনের মতো পরিবেশ। এই উত্তপ্ত গরমে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এটার জন্য একমাত্র দায়ী এই গণবিরোধী সরকার। এরা নদী রক্ষা করতে পারেনি, ভূমিদস্যুরা নদী দখল করে রেখেছে। অন্যায়ভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার কিছুই করছে না। প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়লা পুড়িয়ে তাপকেন্দ্র করলে দেশের কোনো লাভ হবে না- দেশের গাছ, মাছ, ফসল পুড়ে যাবে। কুয়াকাটায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাগেরহাটের রামপালে কয়লা পুড়িয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে- যার কারণে সমুদ্র পাড়ে নারিকেল গাছে নারিকেল ধরে না, ফসল হয় না। আমাদের নিশ্বাস, আমাদের অক্সিজেন হচ্ছে সুন্দরবন- সেই সুন্দরবনকে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এই গণবিরোধী সরকার। তাই আজ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই দেশ নদী-খাল-বিল দিয়ে ভরা, কিন্তু সেই নদী-খাল-বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সারা দেশ গরমে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা মনে হচ্ছে ৪৩ বা ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা। এ রকম গরম বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো পড়েনি। সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে। যে দেশে এত গাছপালা, এত নদী-খাল, সেই দেশে এ রকম গরম হওয়ার কথা না। শুধু সরকারের লুটেরানীতি, নদীভরাট করার নীতির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমার দেশের মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। লালমনিরহাট এখন কসাইখানা। একদিন পরপর বিএসএফ বাংলাদেশের মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে। সেইখানে এই সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই। আর দেশের মানুষকে তারা দম বন্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- বিএনপি নাকি যে কোনোভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়। আমরা দখল করতে যাব কেন, দখল তো আপনারা করে রেখেছেন। জনগণ ছাড়া, ভোট ছাড়া আমি-ডামি, আমরা আর মামুরা মিলে ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন। দেশের জনগণ চায় আন্দোলনের মাধ্যমে অতি দ্রুত এ সরকারের পতন হোক এবং জনগণ ভোটের মাধ্যমে যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে সরকার গঠন করবে।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে রিজভী বলেন, দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে। এ জন্য দেশের জনগণ চায় এই সরকারের বিদায়। এই সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমেই দেশের জনগণ মুক্তি পাবে।
এ সময় তিনি পথচারী, রিকশাচালকদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শামসুর রহমান, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সাদিউল কবির নীরব, তৌহিদুল হাসান রিয়ন, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, তারেক উজ জামান তারেক, ওমর ফারুক কাওসার, যুগ্ম সম্পাদক ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাজু আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, ওমর ফারুক পাটোয়ারীসহ দল ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।