প্রতিটি স্কুলে ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও অভিভাবক-শিক্ষক সমিতি রয়েছে মাত্র ২৭.৫ শতাংশ স্কুলে। আর শিক্ষার্থীদের ফোরাম (স্কুল ক্যাবিনেট) রয়েছে ৫৭ শতাংশে। স্কুল ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক-অভিভাবকদের ভূমিকা নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটিই স্কুলের বেশির ভাগ বিষয়ের দেখভাল করে এবং স্কুলের বিষয়ে অন্য অংশীদারদের প্রভাব প্রত্যাশা করে না। ফলে অভিভাবক-শিক্ষক মিটিং এবং স্কুলের বিষয়ে অভিভাবকরা প্রায়ই আগ্রহী থাকেন না।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে প্রকাশিত ‘রিডিউসিং স্কুল ড্রপ আউট ইন আরবান স্লামস অব বাংলাদেশ : ইমপ্যাক্ট অব কভিড-১৯’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। প্ল্যান ইন্টারনাশনাল বাংলাদেশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪০টি স্কুলে এবং ৬৭৩টি বাসায় বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীর মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম চলে।
গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভের সভাপতি ড. মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, ‘এই জরিপ মতে, অংশীদাররা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশু, বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকার মেয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার উচ্চ হার সম্পর্কে সচেতন। তবু তারা মনে করে না যে এই হার চিহ্নিত ও প্রতিরোধে তাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। অংশীদাররা মনে করে, বাসায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দেখভাল করার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে অভিভাবকদের। স্কুল শিক্ষক এবং অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত স্কুলে যাওয়া এবং পড়াশোনা নিশ্চিত করা। স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া প্রতিরোধে শিক্ষক ও অভিভাবকের নজরদারি প্রয়োজন।’
প্রতিবেদন মতে, স্কুল পুনরায় চালু হওয়ার ফলে আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান জরুরি। সব শিক্ষার্থী যেন স্কুলে ফিরে আসে, তা নিশ্চিত করতে স্কুলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। স্কুলের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য ফিয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মত দেন তাঁরা। ঝরে পড়া রোধে স্থানীয় সরকারের জোরদার ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয় গবেষণার সুপারিশে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘করোনা আমাদের সামনে এক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। তবে আমরা স্কুল বন্ধের এক সপ্তাহের মধ্যেই সংসদ টিভি ক্লাসরুম ও অনলাইন ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছি। প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা লক্ষ রাখছি, যেন সামনে এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমাদের আরো জোরালো প্রস্তুতি থাকে।’