কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামতের নামে অর্ধকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এতে উপজেলা প্রকৌশলী, ঠিকাদারসহ পরস্পর যোগসাজশে অর্ধকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয়নপত্র তৈরির মাধ্যমে বিলের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও সরকারি টাকা লোপাটের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি এবং বিদ্যালয়গুলো সরকারি বরাদ্দ পেলেও মেরামত কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অধীনে ওই উপজেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের কার্যাদেশ হয়। বিদ্যালয়গুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইলিয়টগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিংলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নৈয়াইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালেরছেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরগোয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ পায়।
এসব বিদ্যালয়ের কাজ পায় জেলার মেঘনা উপজেলার মেসার্স খাজা গরীব এ নেওয়াজ ট্রেড অর্গানাইজেশন, কুমিল্লা কোটবাড়ী এলাকার মেসার্স এম আই কন্সট্রাকশন।
অভিযোগের বিষয়ে টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের সরদার, জিংলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন খান, ইলিয়টগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়া, গোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তারসহ অন্যান্যরা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যাদেশ দেখায়নি। তারা মনগড়াভাবে যতসামান্য কিছু কাজ করে বাকি কাজ অসমাপ্ত রেখে তাদের (প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি) স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি সাপেক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী (বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে কর্মরত) আহসান আলী জানান, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে যেভাবে কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন সেভাবে বিল পরিশোধসহ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়।
উপজেলা প্রকৌশলী আফসার হোসেন খন্দকার বলেন, ‘বিষয়টি এলজিইডি কুমিল্লা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহোদয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে। তাই এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
দাউদকান্দি ইউএনও মো. মহিনুল হাসান বলেন, অভিযোগটি আমার যোগদানের আগের। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী বলেন, অভিযোগটি গুরুতর, তদন্তেও এর প্রমাণ রয়েছে বলে জানি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর মেরামত কাজ শেষ করার দাবি জানাই।
সূত্র জানায়, এসব বিদ্যালয়ে পিইডিপি-৪ এর অধীনে মেজর মেইনটেনেন্সের আওতায় মেরামত কাজের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দ দ্বারা সম্পূর্ণ কাজ না করে উপজেলা প্রকৌশলী, তার কার্যালয়ের হিসাবরক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরস্পর যোগসাজশে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলন করে নেয়। সূত্র আরও জানায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রকৌশলী আহসান আলীসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বিদ্যালয়গুলো মেরামতের কাজ ৪৫ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। বিষয়টি তৎকালীন দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নজরে এলে অভিযোগ তদন্তের জন্য তিনি ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেন। এ বিষয়ে একই সালের ৪ মার্চ তদন্ত করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিন পাতার প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পান তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হলেও সরকারি অর্থ আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।