শ্রেণিকক্ষে পাঠে অংশগ্রহণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একঘেয়েমির রেশ কাটাতে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা জরুরি। যেমন- খেলাধুলা, আবৃত্তি, মজার গল্প ও ছড়া পাঠ, বিতর্ক, কুইজ, শারীরিক ব্যায়াম প্রভৃতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি স্কুলে বার্ষিক ম্যাগাজিন (স্কুল সংবাদপত্র) প্রকাশ অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। দুঃখের বিষয় হলো, কয়টা স্কুল খুঁজে পাওয়া যাবে যারা প্রতিবছর স্কুল বার্ষিকী প্রকাশ করে। ব্রাটান্ড রাসেল তার ‘শিক্ষা ও সমাজ কাঠামো’তে বলেছেন, পর্যাপ্ত শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত: জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে যেনো আবেগগত চাপের সম্মুখীন হতে না হয়। আবেগগত বা মানসিক চাপ থাকলে অবসন্নতা আসবেই। সুতরাং শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা মুক্ত জীবন দরকার।
দ্বিতীয়ত: যে জ্ঞান কোনো কাজে লাগে না সেসব বিষয় পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিতে হবে। ইতিহাসের অনেক কিছু জানা খুবই জরুরি; কিন্তু স্কুলগুলোতে এসব একবারেই পড়ানো হয় না।
তৃতীয়ত: শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানী মনের অধিকারী করে গড়ে তোলার জন্য খাটাখাটি করা দরকার।
আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির গল্প, ইতিহাস পড়ে মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে প্রশান্তির হাসি দেই। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, অনুশীলন ও চিন্তা গবেষণা করে মন জগতের পরিবর্তন ও বিকাশ ঘটানোর ব্যাপারে সময় দুর্লভ। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনার তাড়নার চেয়ে মোবাইল গেম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থেকে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলছে।
বিজ্ঞানের যুগে আমাদের আবিষ্কারের বাস্তব উদাহরণ খুবই কম। নৈতিক মূল্যবোধ চর্চার হার একবারে নিম্নে। বর্তমান শিক্ষাক্রমে লেখাপড়ার ধরনে অনুসন্ধান, হাতে কলমে শিখানোর নির্দেশনা থাকলেও প্রয়োগ দেখানোর সুযোগ সীমিত। শহর গ্রাম ভেদে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বেচ্ছায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনের জন্য প্রবল ইচ্ছার প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হলে প্রতিভা বিকাশিত হওয়ার পথ সহজ হবে।
শিক্ষকের চাপে পড়ে অনেক সময় তারা নিজেদের প্রতি হতাশ হয়ে পড়ে। আপেক্ষিক ভালো মন্দ বিচার করে মেধাবী, কম মেধাবী, মেধাহীন ধারণা সৃষ্টি করা শিক্ষার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিতর্কে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন, কবিতার ছন্দে আবেগ, ভালোবাসা, মমতা, দেশ ও প্রকৃতি প্রেম ফুটিয়ে তোলা, গল্পে, নাটকে জীবনের নানারঙ প্রকাশ করা যেনো বুদ্ধির শৈল্পিক ভাবনা আবিষ্কৃত হয়। তাছাড়া স্বদেশের রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শহর ও গ্রামের মানুষের জীবন ধারণের বৈচিত্র্যময় পার্থক্য।
সেসব বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ ও পড়ার মাধ্যমে বিস্তার ঘটাতে পারে। মজার মজার গল্প, ছড়া ও কবিতা লিখে সবার হাসির খোরাক যোগাতে পারে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শিক্ষা প্রশাসনের লেখা, নির্দেশনা ও শুভেচ্ছা বিনিময় সবার মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এক স্কুলের ম্যাগাজিন অন্য স্কুল পড়ার মাধ্যমে আন্তস্কুল সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সুপ্ত প্রতিভার ধারণা লাভ করতে পারে। প্রতিটি স্কুল শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগতে অবিরাম বিচরণ ধরে রাখতে প্রতি বছর স্কুল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে পারলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে। জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হবে দেশ ও জাতি।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)