কোভিড-১৯ শিক্ষাক্ষেত্রে একদিকে যেমন সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে আবার তেমনি কিছু কিছু অভিভাবকের মনে প্রত্যয় জন্মিয়েছে যে হোম স্কুলিং ক্লাস স্কুলিংয়ের চাইতে ভাল। ইংল্যান্ডের এমিলি ক্লার্কের ছেলেদের কথাই ধরা যাক। গত বসন্তে প্রথমবারের মতো সকল ছাত্রছাত্রীর জন্য স্কুল যখন খুলে দেয়া হলো তখন অন্য সবাই লকডাউনের পর খোলা প্রথম স্কুলে গেলেও এমিলির তিন ছেলে দূর শিক্ষণের মাধ্যমে আগে থেকে লেখাপড়া করছিল। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন যে, এমিলির ৫ বছরের ছেলের কিডনি ট্রান্সপ্লানটেশন হয়েছে শিশু বয়সে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তার অনেক বেশি। কিন্তু ৬ মাস পর মিসেস এমিলি তার সন্তানদের স্কুল থেকে প্রত্যাহার করে এনে নিজেই তাদের ঘরে বসে শিক্ষাদান শুরু করেন। তবে এর পেছনে স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ প্রধান কারণ ছিল না। তিনি বলেন, তার বাচ্চারা খুশি। কারণ ক্লাসরুমে তাদের সময় কাটাতে হচ্ছে না। তাছাড়া মাকে পেয়ে তারা আরও তাড়াতাড়ি শিখতে পারছে।
মহামারীরকালে সন্তানদের দূরশিক্ষণে সাহায্য করার মধ্যে অনেক অভিভাবক তেমন একটা উৎসাহ খুঁজে পান না। তারা এ ব্যাপারে হাত গুটিয়ে থাকার পক্ষপাতী। তবে কিছু কিছু বাবা-মা এভাবে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা অধিকতর সহজ ও লাভজনক বলে মনে করছেন। এ্যাসোসিয়েশন অব ডাইরেক্টর অব চিল্ড্রেন সার্ভিসেস নামে স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন গত নবেম্বরে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায় যে, ইংল্যান্ডে গৃহে শিক্ষিত সন্তানদের সংখ্যা ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে ৪০ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৭৫ হাজার হয়েছে। স্কুলবয়সী শিশুদের সংখ্যার তুলনায় এটা ১ শতাংশের কম। কিন্তু চার বছর আগে যারা স্কুলের বদলে গৃহশিক্ষায় নিয়োজিত ছিল তাদের দ্বিগুণ। আমেরিকায় কিছু কিছু স্কুলভবন গত বছরের মার্চ থেকে আর খোলেনি। সেখানেও ঘরে পড়া এই শ্রেণীর শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। গত অক্টোবরে পিউ রিসার্চ সেন্টারে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭ শতাংশ মার্কিন বাবা-মা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সন্তানদের গৃহে শিক্ষা দিচ্ছেন যা গত বসন্তের তুলনায় ৩ শতাংশ বেশি।
কোভিড-১৯-এর ধ্বংসাত্মক ফল শুরু হবার আগে থেকে গৃহশিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছিল। কয়েক দশক ধরে আমেরিকায় এই শ্রেণীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষক হচ্ছে রক্ষণশীল খ্রীস্টান; যাদের আশঙ্কা, স্কুলগুলো তাদের সন্তান বা ছাত্রছাত্রীদের দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। তবে শিক্ষা বিভাগের জরিপ অনুযায়ী যেসব অভিভাবক বলেন যে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাই তাদের সন্তানদের গৃহশিক্ষা দেয়ার সবচেয়ে বড় কারণ তাদের সংখ্যা ২০০৭ সালের তুলনায় কমে এসেছে। বেশিরভাগ বাবা-মা এখন স্কুলগুলোতে ড্রাগ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়। যারা স্কুলের কাছাকাছি বাস করে এবং প্রাইভেট স্কুলগুলোতে পড়ানোর মতো সঙ্গতি নেই তারা হোম-স্কুলিংই উন্নততর বিকল্প হিসেবে সিদ্ধান্ত নেন। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চেরিল ফিল্ড স্মিথ বলেন, পাবলিক স্কুলের বর্র্ণবাদ সম্পর্কে কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার ও অন্যান্য সংখ্যালঘু শ্রেণীর মানুষ বাড়তি উদ্বেগ পোষণ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোম এডুকেশনে পড়াশোনা করা রেবেকা ইংলিশের যুক্তি হলো- সারাবিশ্বে ঘটনাচক্রে হোম স্কুলে পড়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন অধিকতর সচরাচর হয়ে উঠেছে। এই শ্রেণীর বাবা-মার বক্তব্য হলো, স্থানীয়রা স্কুলগুলো তাদের সন্তানদের অক্ষমতা বা আবেগগত সমস্যার সমন্বয় করতে পারেন না বলে তারা শেষ উপায় হিসেবে সন্তানদের স্কুল থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অনেক স্থানে বিশেষ শিক্ষা সার্ভিসের সম্প্রসারণের কাজটা চাহিদার সঙ্গতির সঙ্গে রক্ষা করে করা হয় না। ফলে মূল্যায়নের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
ব্রিটেনে গৃহশিক্ষকদের পক্ষে লবি করে থাকে এমন এক সংগঠন ‘হেলথহাব’এর জুলিয়েট ইংলিশ বলেছেন যে, মহামারীর সময় দূর শিক্ষার তত্ত্বাবধান করতে গিয়ে কিছু কিছু বাবা-মা স্বীকার করেছেন যে তাদের সন্তানরা সহপাঠীদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ে আছে। অন্যরা লক্ষ্য করেছেন যে, স্কুলে যে পাঠ ঠিক করে দেয়া হয় বাচ্চাদের পক্ষে তা সম্পন্ন করা অনেক সহজ বলে তারা মনে করেন। এই মন্তব্যটা লাতিন আমেরিকার গৃহশিক্ষকদের পরামর্শ দেয়া একটা ওয়েবসাইটের পরিচালক পলা লাগো নামে এক আর্জেনটাইনের।
এডুকেশন আদারওয়াইজ নামে একটি সংগঠন ব্রিটেনে ঘরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন করে থাকে। সংগঠনের ওয়েন্ডি চার্লস ওয়ার্নার মনে করেন, যে ক্ষুদ্র সংখ্যক বাবা-মা যারা বাচ্চাদের বাড়িতে শিক্ষা দেয়া শুরু করেছেন তারা মহামারীর সময় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর ভয় থেকেই করেছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গত লকডাউনের পর ব্রিটেনের স্কুলগুলো আবার খুলে দেয়া হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভার্চুয়াল লার্নিংয়ের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে তিনি মনে করেন বাচ্চারা বাড়িতে পড়ায় ভাল করছে এটা দেখার পর বিপুল সংখ্যক বাবা-মা এমন সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেনিস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিক ওয়ার্ন মনে করেন যে, বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো বাবা-মায়েরা যখন দেখবেন করোনা সংক্রমণ কমে গেছে তখন তারা বাচ্চাদের আবার ক্লাসরুমে পাঠিয়ে দেবেন। তবে তিনি এও মনে করেন যে বাবা-মায়েরা স্কুলের দেয়া পাঠক্রম অনুসরণ করছেন নাকি নিজেরাই পাঠক্রম ঠিক করে চালাচ্ছেন সেটা বড় কথা নয়। যদি তারা দেখেন যে মহামারীর সময়কার শিক্ষার অভিজ্ঞতা অনেক লাভজনক ও কাজের তাহলে ভবিষ্যতে স্কুলে বাচ্চারা সমস্যার সম্মুখীন হলে তারা হোম স্কুলিংয়ের কথা বিবেচনা করে দেখতে অধিকতর আগ্রহী হতে পারেন।
কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে অন্যান্য পরিবর্তন একাজটাকে উৎসাহিত করতে পারে। চাকরিবাকরি হারিয়ে অধিক থেকে অধিক সংখ্যক বাবা-মা বাড়িতে বসে থাকছে। তারা তখন বাচ্চাদের পড়াশোনার দিকে নজর দিচ্ছে। আমেরিকায় দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে এমন সব স্ট্র্যাটেজি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যা হোম এডুকেটররা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার উন্নয়ন এবং শিক্ষার বোঝা ছড়িয়ে দিতে কাজে লাগিয়েছে। হোম স্কুলিংয়ের সমর্থক অনেক বাবা-মা সমবায় সমিতি গঠন করেছেন। তারা অঙ্কের জন্য বাড়তি টিউশনির খরচ করছে এবং তাদের বাচ্চারা একসঙ্গে খেলাধুলা করছে।
তবে গৃহশিক্ষকদের সংখ্যার স্থায়ী বৃদ্ধি এক পুরনো ধরনের উদ্বেগকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে আমেরিকায় উন্নততর একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। তাতে দেখা যায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যারা বাড়িতে স্কুল করেছে পাবলিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় তাদের চার বছরের ডিগ্রী সম্পন্ন করার সম্ভাবনা কম থেকেছে। কিছু কিছু বাবা-মা ডারউইন মতবাদের মতো ধারণাগুলো থেকে বাচ্চাদের আড়াল করার চেষ্টা করেন। ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে, কিছুসংখ্যক বাবা-মা গৃহশিক্ষকে আড়াল করে বাচ্চাদের এমন সব অনিবন্ধিত স্কুলে পাঠাচ্ছে যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা কঠোরভাবে অনুসৃত হয়। ২০১৬ সালে ব্রিটেনের স্কুল পরিদর্শকরা একটি অনিবন্ধিত স্কুল টাস্কফোর্স গঠন করেন। তারপর থেকে তারা ৭৪০ স্কুলে তদন্ত চালিয়ে এভাবে উপসংহার টানে যে, এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ১০০ কোন না কোনভাবে আইন লঙ্ঘন করছে।
আরেক আশঙ্কার কথা এই যে, হোম স্কুলিং বৃহত্তর পরিসরে মেনে নেয়া হলে স্কুলগুলোর উন্নয়নে মার খাবে। ব্রিটেনের হেড টিচারদের বিরুদ্ধে অনেক সময় অভিযোগ করা হয় যে বাবা-মাদের তাদের বেয়াড়া ধরনের, অক্ষম বা লেখাপড়ায় খারাপ করা বাচ্চাদের বাড়িতে শিক্ষা দেয়া উচিত। যদিও তা কখনই সেরা অপশন হতে পারে না। এই সমস্যা বিশেষভাবে সেসব ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে, সাধারণত যাদের ১৬ বছর বয়সে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো ঘনিয়ে আসে।
এই সংক্রান্ত তীব্র বিতর্কের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নিপীড়ন, নির্যাতনও সম্পর্কিত। ২০১১ সালে ব্রিটেনে স্কার্ভি রোগে মারা যাওয়া আট বছরের শিশু ডাইলান সী ব্রিজের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তার বাবা-মা কখনই তাকে স্কুলে ভর্তি করায়নি। নিরানন্দ ঘটনা আমেরিকায়ও আছে এবং তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গৃহস্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত ৭ বছরের ছেলে এন্ড্রিয়ান জোন্স যার বাবা ও সৎমা তাকে না খাইয়ে রাখত এবং এভাবে ২০১৫ সালে তাকে মেরে ফেলা হয়। তার লাশ শূকর দিয়ে খাইয়ে ফেলা হয়। এ ধরনের দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে একটা সমাজব্যবস্থার সাধারণত একাধিক ব্যর্থতার প্রতিফলন ফুটে ওঠে। অথচ যে সমাজ ব্যবস্থার কাজ হচ্ছে শিশুর নিরাপত্তা বিধান। শিক্ষকদের সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ রক্ষার মধ্যে শিশুদের অপুষ্টি বা তাদের প্রতি দুর্ব্যবহারের ঘটনা চিহ্নিত করার আরও সুযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে কানেক্টিকাটের ৬ স্কুল এলাকায় পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায় যে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার যারা পূর্ববর্তী তিন বছরে তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন, সেই সন্তানদের অন্তত একজন সন্দেহভাজন শিশু অবহেলা বা দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে।
অনেক দেশ গৃহশিক্ষা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। জার্মানিতে এমন শিক্ষা বেআইনী। ফ্রান্সে শিক্ষা পরিদর্শকরা গৃহশিক্ষকদের ওপর নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবেলার বৃহত্তর ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গৃহশিক্ষার ওপর কঠোরতর বিধিনিয়ম আরোপের প্রস্তাব করেছেন গত বছর। পক্ষান্তরে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়েন বোলসোনারো গৃহশিক্ষাকে সহজতর করতে চান। ব্রাজিলে গৃহশিক্ষায় শিক্ষাপ্রাপ্ত এমপি আলেকজান্ডার মরিরা মনে করেন যে স্কুলগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এমন সম্ভাবনাই বেশি যে, গৃহশিক্ষাকে সুস্পষ্টভাবে বৈধতা দিয়ে কংগ্রেস একটি খসড়া বিল পাস করবে।
ব্রিটেনে এই সংক্রান্ত আইন যথেষ্ট শিথিল। বাবা-মায়েদের এটা নিশ্চিত করতে হয় যে তাদের সন্তানরা তাদের বয়সের উপযোগী পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা লাভ করবে যাতে তারা ঠিক কি শিক্ষা লাভ করবে তা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত নয়। কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে সরকার একজন ছাত্রকে স্কুলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় গৃহশিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা স্থানীয় কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও সময় কমই থাকে। ২০১৯ সালে সরকার বলেছে যে, গৃহশিক্ষকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবন্ধিত করা দরকার বলে তারা ভাবছে। কারণ তাদের আশঙ্কা, কিছু কিছু তরুণ সমাজ সেবা কার্যক্রমে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
গৃহশিক্ষা আমেরিকার সকল রাজ্যে বৈধ। নিউইয়র্কে গৃহশিক্ষকদের বাধ্যতামূলক বিষয়ের তালিকার ওপর শিক্ষাদানে অবশ্যই সময় ব্যয় করতে হয় এবং তাদের ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই আদর্শ কিছু পরীক্ষা দিতে হয়। দেশের কিছু কিছু স্থানে হোম স্কুলিংয়ে বাবা-মায়ের মৌলিক কিছু গুণাবলী থাকতে হয় যেমন হাইস্কুল ডিপ্লোমা। তবে হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক এলিজাবেথ বার্থোলেটের যুক্তি হলো যতই কঠিন, কঠোর বিধিনিয়ম করা হোক না কেন সেগুলোর কঠোর প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকলেও প্রায় ক্ষেত্রেই অতি দুর্বলভাবে হবে এবং অব্যাহতি হবে লাগামহীনভাবে। নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত যুক্তি পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে করোনা মহামারীর কারণে গৃহ স্কুলকারীদের সরকারের কাছ থেকে কতটা সাহায্য-সমর্থন পাওয়া উচিত তা নিয়ে নতুন বিতর্কের ইন্ধন সৃষ্টি হতে পারে। জুন ম্যাকডোনাল্ড প্লেস নামে একটি সংগঠন চালিয়ে থাকেন যার অর্থায়ন করেন ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড বরো কাউন্সিল। কাউন্সিলের কাজ হচ্ছে স্থানীয় হোম স্কুলে যারা নিজেদের বাচ্চাদের পড়ান এমন বাবা-মাদের বাচ্চাদের বড় ধরনের জাতীয় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করা। কাউন্সিলের লাইব্রেরী আছে, ক্লাস রুম আছে, সায়েন্স ল্যাবরেটরী আছে যেগুলোর সুযোগ হোম স্কুলাররা ক্লাস শেষ হবার পর নিতে পারে। তবে এমন সুযোগ-সুবিধা বিরল।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘থিংক চয়েস’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মাইকেল ম্যাকমেইন জানান যে এরিজোনা ও ফ্লোরিডার কর্তৃপক্ষ এখন শিক্ষা সঞ্চয় এ্যাকাউন্ট খোলার অফার দিচ্ছে। এমন এ্যাকাউন্টের লক্ষ্য হচ্ছে গৃহশিক্ষায় বাচ্চাদের পড়ায় এমন কিছু বাবা-মায়ের বিশেষ করে যেসব বাচ্চার কোন বিষয়ে শিক্ষায় ঘাটতি আছে সেটা পূরণে এমন সরকারী অর্থ এই কাজে ব্যয় করা। কোয়ালিশন ফর রেসপনসিবল হোম এডুকেশন নামে একটি গবেষণা গ্রুপের ব্যাচের কোলম্যান মনে করেন যে, স্থানীয় হোম এডুকেটরদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমেরিকার প্রতিটি স্কুল, জেলায় একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া উচিত। তাছাড়া ঘরে পড়া সব বাচ্চার স্কুল পার্টটাইমে উপস্থিত হওয়ারও সুযোগ দেয়া দরকার। বর্তমানে গুটিকয় অঙ্গরাজ্যের কিছু লন এ কাজে ব্যবহারের জন্য নিষেধ রয়েছে।
এদিকে ইংল্যান্ডে ক্লার্ক দম্পতি ঠিক করেছেন যে, মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়ার মতো বড় না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের বাচ্চাদের বাড়িতে রেখেই শিক্ষাদান করার মনস্থ করেছেন। ততদিনে তারা ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হবার সুযোগ পাবে।
লেখক : এনামুল হক
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট