স্কুলকক্ষ দখল করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

মেহেরপুর প্রতিনিধি |

বিদ্যালয়ের মিলনায়তন কক্ষ, সাধারণত যেখানে বিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন বা শিক্ষার্থীদের ইনডোর খেলাধুলা হয়। বড় সেই মিলনায়তন কক্ষ দখল করে বানানো হয় পেঁয়াজ সংরক্ষণের গুদাম। এভাবেই দেড় মাস বিদ্যালয়ের মিলনায়তন দখল করে নিজের ক্ষেতে উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম।

আর শুধু পেঁয়াজ সংরক্ষণই নয়, পচনের হাত থেকে তা রক্ষা করতে বিদ্যালয়ের ১২টি ফ্যান ও ৮টি লাইট দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ব্যবহার করে আসছিলেন তিনি। ঘটনা জানাজানি হলে গত মঙ্গলবার কর্র্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর পর প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম রাতারাতি বিদ্যালয় থেকে সেই পেঁয়াজ নিজ বাড়িতে সরিয়ে নেন। 

সরেজমিন গিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম নিজ জমির ৫০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য তার কর্মস্থলকে বেছে নেন। মূলত সংরক্ষণ করে সংকটকালে বেশি মুনাফায় বিক্রির উদ্দেশ্যে পেঁয়াজ স্কুলে আনা হয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের গোডাউন হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বিদ্যালয়ের মিলনায়তন কক্ষ। প্রায় দুই মাস ওই কক্ষটি বন্ধ করে কক্ষের ১২টি ফ্যান ও ৮টি লাইট ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে চলছিল পেঁয়াজ সংরক্ষণের কাজ। সরকারি বিদ্যালয়ের বিশাল কক্ষের মেঝেতে ছিল প্রধান শিক্ষকের নিজের জমিতে উৎপাদিত পেঁয়াজ। ফলে ওই কক্ষে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান বা শিক্ষার্থীদের ইনডোর খেলাধুলা সবই বন্ধ হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ চিত্র ধরা পড়লে প্রধান শিক্ষক রাতারাতি বিদ্যালয় থেকে পেঁয়াজ নিজ বাড়িতে সরিয়ে নেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বুড়িপোতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ জামালের সঙ্গে যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের কক্ষকে নিজের কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। এর আগেও প্রধান শিক্ষক সরকারি বিদ্যালয়ের মিলনায়তন কক্ষ দখল করে নিজের জমিতে উৎপাদিত ধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ ও হলুদ সংরক্ষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের দপ্তরি ঠান্ডু শেখ বলেন, ‘স্কুলের পেঁয়াজ ছিল হেডস্যারের। তিনি প্রায় দুই মাস স্কুলের কক্ষ দখল করে নিজের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। স্যার ভালোমন্দ কিছু করলে কর্মচারী হিসেবে আমাদের বলার সাহস থাকে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বুড়িপোতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ জামালের অনুমতি নিয়ে স্কুল কক্ষ ব্যবহার করে নিজের জমির পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছিলাম। তবে স্কুলের কক্ষ ব্যবহার করে এমন কাজ করা ঠিক হয়নি।’

অবশ্য বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বুড়িপোতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহ জামাল জানান, তিনি পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়টি শুনে প্রধান শিক্ষককে তা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন। অবশ্য তার অনুমতি নিয়ে পেঁয়াজ রেখেছিলেন বলে প্রধান শিক্ষক যে দাবি করছেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেই মঙ্গলবার অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেছি। শহরের উপকণ্ঠে একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ে এমন ঘটনায় অবাক হয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাই ঘটনার গভীর তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00301194190979