স্কুলভর্তি: আবেদনে ভোগান্তি সরকারিতে, তালিকায় নেই সব বেসরকারি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রথমবারের মতো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে দেশের সব ধরনের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারের তত্ত্বাবধানে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে ২৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রথম দিনই এই প্রক্রিয়া হোঁচট খেয়েছে। অন্তত এক হাজার ৩০০ বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এ প্রক্রিয়ায় আসেনি। এর মধ্যে ঢাকার বিখ্যাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান আছে।

সবচেয়ে বড় ভোগান্তি নিয়ে এসেছে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ঢাকা মহানগরের বাইরের কয়েকটি মহানগর ও অনেক জেলার তালিকা ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়নি। যে কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওইসব এলাকার অভিভাবকরা আবেদন করতে পারেননি। সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন।


এ প্রসঙ্গে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজিজ উদ্দিন বলেন, মোট তিন হাজার ৯৮৮টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৭০০ মতো এই প্রক্রিয়ায় এসেছে। যারা অনলাইনে সরকারি তত্ত্বাবধানে আসেনি তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আলাদাভাবে এবং মাউশি গঠিত কমিটির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চালাতে হবে। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি কারিগরি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা টেলিটক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে (বিসিসি) জানানো হয়েছে।

আগের ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল ৯টায় ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট (http://gsa.teletalk.com.bd) উন্মুক্ত করার কথা। কিন্তু ২ ঘণ্টা পর বেলা ১১টায় তা খুলে দেওয়া হয়। আবার বিলম্বে খোলা হলেও ওয়েবসাইট ছিল অপূর্ণাঙ্গ। সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সব জেলার তথ্য আপলোড করা হয়নি। ঢাকা মহানগরের বাইরে অনেক জেলার প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখা যাচ্ছে না।

ঢাকা মহানগরের তালিকা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বাহিনী পরিচালিত স্কুল এ তালিকায় নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দনিয়া একে হাইস্কুল তালিকায় নেই। বংশাল থানায় পাশাপাশি দুটি প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। এর মধ্যে আহমদ বাওয়ানী স্কুল ও কলেজ তালিকায় থাকলেও হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় নেই। বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত ক্যামব্রিয়ান আছে তালিকায়। কিন্তু পুরান ঢাকার রায়হান স্কুল ও কলেজ, উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল ও কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান নেই এই তালিকায়।

বিষয়টি জানতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে ওই স্কুলের এক শিক্ষক জানান, ‘আমার জানা মতে, মন্ত্রণালয়ে আমাদের স্কুল তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ার ব্যাপারে শিক্ষকদের অনীহা ও ক্ষোভ ছিল। যদি না থাকে তাহলে এটা একটা কারণ হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে এই প্রক্রিয়ায় ভর্তি করা হবে। ৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। এবার কোনো ভর্তি পরীক্ষা হবে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদনকারীদের নিয়ে লটারির আয়োজন করা হবে। ১৫ ডিসেম্বর হবে সরকারি হাইস্কুল আর বেসরকারি হাইস্কুলের লটারি হবে ১৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বর ভর্তির কাজ শেষ করা হবে। ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস শুরু হবে। এই প্রক্রিয়ায় ৩৯২টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আছে। করোনার কারণে এবার ভর্তির আবেদন ফি কমানো হয়েছে। চলতি বছর প্রতিটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে আবেদন ফি ছিল ২০০ টাকা আর সরকারিতে ১৭০ টাকা। এবার দিতে হচ্ছে ৫টির জন্য ১১০ টাকা।

নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীর বয়স ছয় বছরের বেশি হতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিতে ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হবে। অর্থাৎ, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্ধারিত আসনের ১০ শতাংশ আসনে তারা অগ্রাধিকার পাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ১৮ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি করানো হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি করানো যাবে। বেসরকারি স্কুলে ২১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত লটারিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা অনুযায়ী ২৮ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে যে কয়টি আসন থাকবে সেই কয়জন মেধাতালিকায় এবং সমানসংখ্যক অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকবে। অনলাইন আবেদন ও ফি পরিশোধসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বেসরকারি বিদ্যালয় : জেলা পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ভর্তি প্রক্রিয়ার অধীনে আনা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন কমপক্ষে একটিসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যাবে। নিজ প্রশাসনিক থানার বাইরে আশপাশের সর্বোচ্চ তিনটি প্রশাসনিক থানা ক্যাচমেন্ট এলাকা ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা যাবে। একই প্রতিষ্ঠানের দুই শিফটে আবেদন করলে দুটি প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে মর্মে ধরে নেওয়া হবে। আবেদনকারীরা আবেদনের সময়ে প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে মহানগর পর্যায়ের জন্য বিভাগীয় সদরের মেট্রোপলিটন এলাকা এবং জেলা সদরের সদর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পাবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীরা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের ক্রমানুসারে নির্বাচন করতে পারবে।

সরকারি বিদ্যালয় : ঢাকা মহানগরে এবার আছে ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিনটি ফিডার শাখা। এবার জাতীয়করণ হওয়া আরও দুটি বিদ্যালয় যুক্ত হয়েছে। এবারও বিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছে (এ, বি এবং সি) করে ভর্তির কাজ সম্পন্ন হবে। আবেদনের সময় একজন শিক্ষার্থী একটি গুচ্ছের পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভর্তির পছন্দক্রম দিতে পারবে। এখান থেকে লটারির মাধ্যমে একটি বিদ্যালয় নির্বাচন করা হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063490867614746