বাঘা উপজেলার কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ভুয়া বিএড সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাবিবুর রহমান ২০১৭ সালে বিএড সনদের মাধ্যমে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। এই
পদে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ উত্তোলন করছেন। তার সনদটি রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের নামে দাখিল করা বিএড ডিগ্রি অর্জনের সনদটি সঠিক নয় বলে কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
হাবিবুরের বিএড সনদ যাচাইয়ের জন্য রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকাকে পত্র দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সনদটি ভুয়া বলে জানায়। একই সঙ্গে তারা এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করে।
এসব নথির ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদার হাবিবুরের ভুয়া সনদের বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলেন। তাতে ভুয়া বিএড সনদ দাখিল করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ব্যাপারে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সেই মর্মে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে হাবিবুর রহমানের কাছে। এছাড়া এ বিষয়ে জানানোর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্নিষ্ট সব দপ্তরে পত্র দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, হাবিবুর রহমান কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। তবে তার সনদ রয়েছে। এর আগে একই উপজেলার দিঘা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রথমে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড সনদ দাখিল করে তিনি বিএড স্কেল পান; কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড কোর্স বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত না হওয়ায় পরে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রির ভুয়া সনদ দাখিল করেন এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও করান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ওই পদে চাহিত যোগ্যতা ছিল স্নাতকসহ বিএড ডিগ্রি।
এ যোগ্যতা মোতাবেক অনেকেই আবেদন করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কামরুজ্জামান সনদ যাচাই-বাছাইয়ের নিয়ম উপেক্ষা করে, বেআইনি প্রক্রিয়ায় যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে হাবিবুরকেই নিয়োগ দেন। সনদ ভুয়া জেনেও হাবিবুরকে এখনও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে বহাল রাখা হয়েছে। কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
সহকারী শিক্ষক এএইচএম জামান জানান, বিষয়টি নিয়ে মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া একজন অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ও নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানের কাছে লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ওবায়েদ বলেন, তার যোগদানের আগে হাবিবুরের নিয়োগ হয়েছে। সুতরাং বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন জানান, এ বিষয়ে তিনি পত্র পেয়েছেন। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে বলেছেন।
অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে সনদ যাচাই করে ওই সহকারী প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার সনদ সঠিক আছে মর্মে কারণ দর্শানো হয়েছে। তবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব নিয়ম মেনেই তিনি নিয়োগ পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক (ডিডি-ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, আবেদন জমা দেওয়ার সময় দেখভালের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানপ্রধানের। এমপিওভুক্তির নীতিমালার বাইরে যদি কেউ ভুয়া সনদ জমা দিয়ে থাকেন, তবে তার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়ী থাকবেন।