স্কুলে কর্মচারী নিয়োগে ২৮ লাখ টাকার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি |

অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে ২৮ লাখ টাকার ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে চার পদে নিয়োগের প্রলোভনে  প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান গোপনে এ টাকা হয়েছে বলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবক সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে  অভিভাবক সদস্য ও এলাকাবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অভিভাবক সদস্য দেব্রত ভদ্র, পিয়ারি, জাকির ফারাজী, আবের আলী শেখ স্কুলে কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন। তারা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ব্যানবেইসের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে নিয়োগ বন্ধ করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে না জানিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে কাউকে না জানিয়ে ওই কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়ার সব কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি নিজের ইচ্ছেমতো সভাপতির আপন বোন ও আত্মীয়দেরকেও নিয়োগ দিয়েছেন। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, রেজুলেশনে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো স্বাক্ষর নেই। প্রধান শিক্ষক জাল স্বাক্ষর করে ওই কাজ করেছেন। তিনি টাকা আত্মসাৎ ও ভুয়া ভাউচারসহ নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছেন। নিয়োগের বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য গত অক্টোবর মাসে রাতে বিদ্যালয়ে ওই চারটি পদে নামমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়।  

অভিভাবক সদস্য দেব্রত ভদ্র, পিয়ারী, জাকির ফারাজী ও আবের আলী শেখ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান অফিস সহায়ক পদে সুফিয়া খাতুনকে সনদ বানিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি জিয়া মোল্যার স্ত্রী শারমিন বেগম তার বোন সুফিয়া খাতুনের লিখিত পরীক্ষা দেন। খাতা চেক করলে হাতের লেখায় প্রমাণও পাওয়া যাবে বলে তারা দাবি করেন। আয়া পদে সোনালী দাসের শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতীয় পরিচয়পত্রের মায়ের নাম ও জন্ম তারিখ মিল না থাকা সত্ত্বেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ না দিয়ে তাকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তারা আরও জানান, প্রধান শিক্ষকের ব্যানবেইস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর ৯৬২৫ অথচ তিনি বেতন তোলেন ৯৬২৮ নম্বর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। যা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। তাছাড়া প্রধান শিক্ষকের নিয়োগও অবৈধ। তার বিরুদ্ধে ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে মিনিস্ট্রি অডিটে আপত্তি দেয়া হয় এখনও তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তি রয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জিয়া মোল্যার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোনটি রিসিভ করে এক ব্যক্তিতার ভাইয়ের ছেলে পরিচয় দেন। তিনি জানান, তার চাচা ভারত থেকে মঙ্গলবার ফিরেছেন। 

জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষের বিনিময়ে কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বোনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে থেকে নিয়োগ পেতে চেয়েছিলো। তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

নিজের বেতন তোলা প্রসঙ্গে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ব্যাংকের ৯৬২৮ নম্বর হিসাব তিনি বেতন তুলছেন। ৯৬২৫ নম্বর হিসাবটি সচল নেই। তাছাড়া, হিসাবের বিষয়ে ব্যাংকে অবজেকশন দেয়া আছে। তিনি আরও জানান, যথাযথ নিয়মানুসারে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বিভাগের ডিডি অফিস থেকে কোনো তদন্ত হয়েছে কি না সেটি আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান আমার কাছে আসছিলেন এ বিষয়ে কথা বলতে। বিষয়টি জেনে পরে জানানো যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024309158325195