ফরিদপুরের সালথা উপজেলার খারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী ও আয়া পদে চাকরি দেয়ার নামে দুই প্রার্থীর কাছে থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম আনোয়ার হোসেন (৪৮)। তিনি উপজেলার মাঝারদিয়ার দাহিরুন নেছা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক। চাকরির জন্য ঘুষ দেয়া ওই দুই প্রার্থী সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।
অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বিভাগদী গ্রামের শাকিল হোসেনের কাছে থেকে ৭ লাখ ও তার স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারের কাছে থেকে আরও সাড়ে ৫ লাখসহ মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু চাকরি না দিতে পারায় ইতোমধ্যে ওই দুই চাকরি প্রার্থীকে তিন লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়। তবে, বাকি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রায় ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই টাকা আর ফেরত দেননি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
ওই দুই চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমরা আমার চাচাতো ভাই আবু জাফরের মাধ্যমে শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা কয়েক কিস্তিতে দেই। আমাদের জমি-জমা বিক্রি করে টাকাগুলো দেয়া হয়। আমাদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে এলাকার গণ্যমান্য লোকজনকে ধরে তাকে অনুরোধ করেও টাকা ফেরত পাইনি। এছাড়া কয়েকদিন আগে বাকি টাকা দেয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্প দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ে পেরিয়ে গেলেও সে টাকা আর ফেরত দেননি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন।
ওই দুই চাকরি প্রার্থী দাবি করেন, সে (আনোয়ার হোসেন) কয়েকদিন আগে স্বেচ্ছায় স্ট্যাম্পে টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। তবে এখন টাকা না দিয়ে উল্টো আমাদের টাকা দেয়ার দিন জোর করে তার কাছে থেকে স্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছে দাবি করে টাকা নেয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে ওই দুই চাকরি প্রার্থী শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিচার দাবি করেন।
শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য জানতে তার নিজ বাড়ি ও কর্মস্থলে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যবহৃত অন্য আরেকটি মুঠোফোন নম্বর খোলা থাকলেও সে নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মাঝারদিয়ার দাহিরুন নেছা দাখিল মাদরাসার সুপার মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো শিক্ষক কোনো কিছু করে থাকলে তার দায়ভার তো আর আমরা নিতে পারি না। যদি সে অন্যায় করে থাকে সালথার ইউএনও স্যারকে জানাতে পারেন। কারণ, তিনি আমাদের মাদরাসার সভাপতি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, এমন কাজ যদি কোনো শিক্ষক করে থাকেন তবে ওই শিক্ষক অন্যায় করেছেন। এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সালথার উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিনয় চাকী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। যদি ওই শিক্ষক চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নিয়ে থাকেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার বিষ্ণুপদ ঘোষাল বলেন, মাদরাসা আমাদের আওতাধীন নয়। আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দেখভাল করে থাকি। বিষয়টি যেহেতু মাদরাসা বোর্ডের, তারাই এ ব্যাপারে তদন্ত করে দেখবেন। ফরিদপুরে কোনো মাদরাসা বোর্ডের অফিস নেই। তাই ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যদি চাকরির কথা বলে ওই শিক্ষক টাকা নিয়ে থাকেন তবে এটা আইনগতভাবে অন্যায় করেছে। তবে এ ব্যাপারে যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।