স্কুলে না গিয়েও নিয়মিত বেতন তুলছেন শিক্ষিকা

পিরোজপুর প্রতিনিধি |

করোনার বন্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় নিয়মিত বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার উত্তর নীলতি সমতট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

জানা যায়, কাউখালী উপজেলার উত্তর নীলতী সমতট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুনে যোগদান করেন সহকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি করোনাকালীন সময় থেকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেন দেন। তিনি স্কুলে না আসলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। বিষয়টি ওই স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি জানার পর তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছে সহকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানতে চান। প্রধান শিক্ষক জানান, ওই শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই তিনি স্কুলে আসছেন না। পরে ওই শিক্ষকের স্থানে ক্লাসের পাঠদানের জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে নীলতি গ্রামের শুকতা ও রেশমা নামের দুনজনকে চলতি বছরের মার্চ মাসে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

ওই শিক্ষক স্কুলে একদিনও না এসে এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করেও নিয়মিত বেতন-ভাতার সরকারি অংশ উত্তোলন করছেন। তবে জানুয়ারি মাসে ওই শিক্ষক স্কুলে না আসলেও হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর দেখা যায়। তবে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের হাজিরা খাতায় তার কোনো স্বাক্ষর না থাকলেও বেতন-ভাতা নিয়মিত উত্তোলন করেছেন। অথচ বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষা সফরে না যাওয়ার দুই নারী শিক্ষকের একদিনের বেতন কেটে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।
 
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহানারা আক্তার ও পারুল রানী দেবনাথ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পাশ্ববর্তী ভান্ডারিয়া উপজেলার হরিণ পালা ইকোপার্কে ট্রলার যোগে শিক্ষা সফরে যান। শিক্ষা সফরে কারণে ওই দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ওই শিক্ষা সফরে আমরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ওই শিক্ষা সফরে না যাওয়ায় প্রধান শিক্ষক আমাদের ওই দিনে স্কুলে অনুপস্থিত দেখিয়ে এক দিনের বেতন কেটে দিয়েছেন। স্কুল বন্ধ দিয়ে সব শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থী শিক্ষা সফরে অংশ নিলেও পরের দিন প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনায় সব শিক্ষক কর্মচারীরা ওই দিন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন বলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। শিক্ষা সফরে না যাওয়ায় ওই দুই শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দিয়ে তাদেরকে অনুপস্থিত দেখিয়ে এক দিনের বেতন কেটে দেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানাতে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (অ্যাডহক) সভাপতি মনিরুজ্জামান রুবেল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হলেও এখানে একাডেমিক সব দায়িত্ব পালন করেন প্রধান শিক্ষকই। তিনি সব কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আমি দায়িত্ব নেয়ার পরে সহকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকার কারণ জানতে চাইলে ওই শিক্ষক অসুস্থতার কিছু ছবি পাঠান। পরে প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষকদের সঙ্হে কথা বলে ওই শিক্ষকের বেতনের টাকা দিয়ে দুই জন অতিথি শিক্ষক রেখে পাঠদান করানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়। আর ওই শিক্ষক তো আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকেই স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
 
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সহাকারী শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন গত ডিসেম্বর মাস থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় স্কুলের আসছেন না। ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্যের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই তিনি বিদ্যালয় অনুপস্থিত আছেন। ঐ শিক্ষকের পরিবর্তেও কয়েকজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ৪ জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাসের পাঠদান করানো হয়।
 
কাউখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনছি। তবে কোনো শিক্ষক স্কুলে না এসে বেতন নিতে পারবে না। অন্য কাউকে সে তার পরিবর্তে নিয়োগ দিতেও পারবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ইদ্রিস আলী আযিযী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আর কোনো শিক্ষক স্কুলে না যেয়ে সরকারি বেতন-ভাতা নিতে পারবেন না। তিনি তার পরিবর্তে কাউকে নিয়োগ দিয়ে তাকে দিয়ে ক্লাসও কারাতে পারবে না। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029408931732178