স্কুলে যান না প্রধান শিক্ষক, ক্লাস নেন প্রক্সি শিক্ষক

নেত্রকোণা প্রতিনিধি |

নিজের খেয়াল খুশি মতো মাসে দুই-একদিন বিদ্যালয়ে যান প্রধান শিক্ষক। তার পরিবর্তে ক্লাস নিতে রেখেছেন একজন প্রক্সি শিক্ষক। অফিসের চাবি রাখেন নিজের কাছে। ফলে অন্য শিক্ষকদের সকালে স্কুলে এসে বসে থাকতে হয় বারান্দায়। এমন চিত্র নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শওকত আলীর বিরুদ্ধে। 

সরেজমিনে বুধবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জানান, অভিযোগের বিষয়ে বললেও প্রধান শিক্ষক কারও কথা শোনেন না। স্কুলে ক্লাস নেয়ার জন্য এলাকার অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত এক নারীকে রেখেছেন। প্রায়দিনই দুপুরে স্কুল ছুটি দেয়া হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা খুবই বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল হয়নি। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে এই স্কুলের পাঠদান। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড়শ’ শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদের পাঠদানে প্রধান শিক্ষকসহ দুজন শিক্ষক রয়েছেন। 

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো. মোকারম হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক শওকত আলী বসবাস করেন মোহনগঞ্জ পৌরশহরে। মাসে এক-দুই দিন বিদ্যালয়ে আসেন। প্রক্সি শিক্ষকও নিয়মিত স্কুলে আসেন না। অপর সহকারী শিক্ষক শাহীনুর মিয়াও আসেন না নিয়মিত।  

বিদ্যালয়ের পাশে থাকা মনোহারি ব্যবসায়ী আজমপুর গ্রামের আবুল কাশেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষককে মাসে দুই-একবার দেখি স্কুলে আসতে। এই স্কুলে এক সময় অনেক শিক্ষার্থী ছিলো। পড়াশোনা হয় না বলে অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।  

এছাড়া আজমপুর গ্রামের আল আমিন ও রহম আলী জানান, সপ্তাহে কয়েকদিন বন্ধ থাকে। যেদিন খোলা হয় সেদিন দুইটার আগেই ছুটি দিয়ে দেয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

সহকারী শিক্ষক শাহীনুর মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রধান শিক্ষক অফিসের চাবি নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। আমরা বারান্দায় বসে সময় কাটাই। আমি নিয়মিত স্কুলে আসি, মাঝে মধ্যে একটু সমস্যা হয়। তবে প্রধান শিক্ষক স্কুলে কম আসেন। 

প্রক্সি শিক্ষক পপি আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এই স্কুলে দুই হাজার টাকা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়াই। প্রায়দিনই সকালে এসে আমিই স্কুল খুলি। সহকারী শিক্ষক আরও পরে আসেন। আর প্রধান শিক্ষক তেমন আসেন না। আমি এই চাকরির পাশাপাশি একটি এনজিওতে চাকরি করি, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই। সে কারণে অনেকদিন দেখা যায় সকালে আমি স্কুলে আসতে পারি না। ফলে স্কুল খোলা হয় দেরিতে, অথবা কেউ না আসলে স্কুল বন্ধ থাকে। 

আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শওকত আলী নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাঝে মধ্যে নানান কারণে স্কুলে যেতে পারি না। যাতায়াত সমস্যার কারণে এমনটা হয়। তবে বিদালয়ের অফিস কক্ষের চাবি সহকারী শিক্ষকের কাছেই থাকে। শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক কম তাই পড়াশোনার স্বার্থে প্রক্সি শিক্ষক রাখা হয়েছে। স্কুলের নানা বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে, বন্ধ থাকার বিষয়টি তাদের অপপ্রচার। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ সাহা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে অবগত হয়ে প্রধান শিক্ষক শওকত আলী ও সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষকদের সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে হবে, নিয়মানুযায়ী ক্লাস নিতে হবে এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেয়া হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059380531311035