স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করে লাপাত্তা প্রধান শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক আত্মগোপনে। গত ১০ দিন অনুপস্থিত বিদ্যালয়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষকরা। 

এদিকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত ও শাস্তি দাবি করছেন তারা।

জানা যায়, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে গাজীপুর মহানগরীর শরীফপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় শরীফপুর জিয়াশ খান উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৯ জন শিক্ষক ও (৫৬৮ জন) শিক্ষার্থী রয়েছেন।

এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন এমএ মাসুম খান। দায়িত্ব পালনকালে তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অন্য কোনো শিক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করতেন না। তার সমস্ত হিসাব কেরানির সঙ্গে করতেন।

শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব বহুদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কাছে চাওয়া হয়। তবে তিনি প্রভাব খাটিয়ে কখনই হিসাব দেননি। চলতি বছর হিসাব চাইলে তিনি ৭ দিন সময় চান। পরে তাকে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়।

১৫ দিন পর তিনি যে হিসাব দেন তাতে সন্দেহ হলে ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষকরা মিটিং করে বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষককে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি করে তদন্ত শুরু করেন। তারা হিসাব করে ১৯ লাখ টাকার গরমিল বের করেন; কিন্তু সেটি প্রধান শিক্ষক মানতে রাজি হননি। পরবর্তীতে আবারও মিটিং করে প্রধান শিক্ষকের লোকসহ হিসাব করে ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হয়। 

এ ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের শিক্ষাগত সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নানা অসঙ্গতি বের হতে শুরু হয়েছে। তার শিক্ষাগত সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র পর্যালচনা করে দেখা যায়- সনদে তার নাম এমএ মাসুম খান আর জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম মো. আলাউদ্দিন খান। জন্ম খ্রিষ্টাব্দেরও পার্থক্য দেখা গেছে। 

এছাড়া প্রধান শিক্ষক ও তার একমাত্র ভাই যমজ হওয়া সত্ত্বেও বয়স ৬ বছরের ব্যবধান। এরপর থেকে শিক্ষকরা তার সনদ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং এটি তদন্ত করার জন্য আবেদন করবেন বলে জানান।

প্রধান শিক্ষকের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ খান বলেন, আমার বাবা কিছু টাকা হেরফের করেছেন সেটি তিনি দিয়ে দেবেন বলেছেন। তিনি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় রয়েছেন। তার পিতার সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ভিন্ন নামের বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি। তবে কেন এমনটি হয়েছে সেই বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও জানান।

বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক লিপি আক্তার বলেন, আমাকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই কমিটিতে আরও ৩ জন শিক্ষক ছিলেন। হিসাব করে সর্বশেষ ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। এগুলো সব শিক্ষকদের প্রাপ্য অথচ তিনি নিজে এটা ভোগ করেছেন। আমরা টাকা ফেরত চাই।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আলামিন জানায়, শিক্ষক হয়ে দুর্নীতি করেছেন এতে স্কুলের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয় আঙিনায় ফুলগাছ লাগাবেন বলে সবার কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি ফুলগাছও লাগাননি। এছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেন কিন্তু কাজ করেন না।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দীপু মনি জানায়, আমাদের স্কুলে সুন্দর ভবন আছে, সব শিক্ষক আছে কিন্তু রেজাল্ট ভালো হয় না। কারণ প্রধান শিক্ষকের দুর্বলতা। প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে যদি তিনি দুর্নীতি করেন তাহলে আমরা কী শিখব। নতুন করে তার সনদের জালিয়াতির কথা শুনছি, এটা হলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সহকারী প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন খান বলেন, তিনি কোনো ছুটি না নিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত। তিনি বলে গেছেন যখন সময় হবে তখন স্কুলে আসবেন। এটি হতে পারে না, এভাবে একটি স্কুল কিভাবে চলতে পারে। আমরা চাই আমাদের প্রাপ্য হিসাব বুঝে দিক, পাওনা টাকা দিয়ে নিয়মিত স্কুল করুক।

বিদ্যালয়টির আজীবন দাতা ও কোয়াব সদস্য মশিউর রহমান বলেন, তিনি আমাদেরও শিক্ষক। তবে উনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন টাকা তার প্রজেক্টে খরচ করেছেন। তাহলে শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক। সেটি না করে শিক্ষকদের বকাঝকা করে বের হয়ে গিয়েছেন। এলাকায় সবাই তাকে আলাউদ্দিন বলে চিনেন। সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার। আমরা এটির তদন্ত চাই।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এমএ মাসুম খান বলেন, আমি বিদ্যালয়ের কেরানির সঙ্গে কথা বলে হিসাব-নিকাশ শেষ করে তিন মাসের মধ্যে টাকা দিয়ে দেব।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ শাহরিয়ার মেনজিস বলেন, টাকা আত্মসাৎ করে প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিতি বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026421546936035