দেড় টনের বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত আট বছর ধরে জমে থাকা ওই স্কুলের বরাদ্দ দেওয়া ১ হাজার ৬০০ কেজি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। বই বিক্রির এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে তদন্তেও।
গত ৩০ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘বিনামূল্যের দেড় টন বই বিক্রির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি নজরে এলে তা তদন্তের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা প্রশাসন। পরে এ ঘটনায় তদন্তের জন্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোকতার হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার স্কুলের বই বিক্রির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরানের কাছে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোকতার হোসেন।
জানতে চাইলে বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটমকে বলেন, ‘বই বিক্রির ঘটনায় সরেজমিনে গিয়ে তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়। পড়ে তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও মহোদয়কে দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইবুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটমকে জানান, ‘প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বই বিক্রির অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত করতে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে বলা হয়। তদন্তে সরকারি বই বিক্রির ঘটনাটি সত্যতা পাওয়া যায়।’
এ প্রসঙ্গে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি বিনামূল্যের পাঠ্যেবই বিক্রির ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে তদন্তে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বই বিক্রির রেজুলেশন কপি উল্লেখ করা হয়েছে। এখন কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনটি দেওয়া হবে।
বই বিক্রির ঘটনা ও তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘সরকারি বিনামূল্যের পাঠ্যবই কোনক্রমেই বিক্রি করা যাবে না। যদি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা কেউ বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও হাতে পাইনি, তবে দৈনিক শিক্ষাডটকমের রিপোর্টটি দেখেছি। তদন্ত প্রতিবেদনটি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটমকে বলেন, ‘সরকারি বইগুলো না বুঝে বিক্রি করেছি। তবে আর এমন ঘটনা হবে না।’
গত ২০ অক্টোবর রাতের আধারে প্রধান শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত মাধ্যমিক স্তরের ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের বিনামূল্যের সরকারি ১ হাজার ৬০০ কেজি বই ১৩ টাকা দরে চরশৌলমারী বাজারের আবুল কাসেম সিকদার নামের ব্যবসায়ীর কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করেন।