গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একটি স্কুলে কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে ডুমুরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামের প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ১৪ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচনে তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ প্রত্যাশীদের অভিযোগ, ইতোমধ্যে একাধিক চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করে কয়েকলাখ টাকা অগ্রিম আদায় করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাস, আর তার সহযোগিতা করছেন প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি মন্ডল ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।
স্থানীয়রা নিয়োগ প্রত্যাশীরা বলছেন, ডুমুরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় অনেকেই চাকরির আশায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। এমনকি চাকরি পেতে তারা একেক জন নিজের গোয়ালের গরু, বোরো ধান রোপন থাকা অবস্থায় জমি বিক্রি ও ধার নিয়ে তদবিরের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।
প্রার্থীদের অভিযোগ, ইতোমধ্যে অমিত মন্ডল নামের এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নয় লাখ টাকার চুক্তি হয়। ইতোমধ্যে অগ্রীম ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। নৈশপ্রহরী নিয়োগের কথা বলে উৎপল বিশ্বাসের কাছ থেকে সাত লাখ টাকার চুক্তি করে অগ্রীম দুই লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন : অধ্যক্ষ স্বামীর কলেজে দুই পদে এমপিওভুক্ত স্ত্রী!
যারা চাকরির জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, তাদের পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্রও দিয়ে দেবেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি মন্ডল ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাস। এমন অভিযোগ করেছেন অন্যান্য চাকরি প্রার্থীরা।
চাকরি প্রত্যাশীর এক প্রার্থীর অভিভাবক নগেন্দ্র নাথ বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার ছেলে একজন প্রার্থী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আমার ছেলের পরীক্ষা। কিন্তু নিয়োগের জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন আমার কাছে। আমি চার লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলাম। আমার ছেলে পাস করলে সই করে টাকা দেবো। সভাপতি স্বপনের সঙ্গে এমন কথা হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপল বিশ্বাসের সঙ্গে নয় লাখ টাকা চুক্তি করে তিন লাখ টাকা নিয়েছে। এজন্য আমারটা বাদ হয়ে গেছে। এছাড়া, লব বেপারীর সঙ্গে ৮ লাখ টাকার চুক্তি করে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। তাদেরকে প্রশ্ন দেয়া হয়েছে এবং আগামীকাল সে প্রশ্নে পরীক্ষা হবে।
চাকরি প্রার্থী পবিত্রের বাবা ভগিরথ বাবু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্বপন বাবু আমার ছেলেকে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চেয়েছেন। অন্য জায়গায় টাকা বেশি পেয়ে আমাকে ‘না’ বলে দিয়েছেন। আমাকে তিনি অনেক আশ্বাস দিয়েছিলেন।
অন্য এক চাকরি প্রার্থীর ভাই প্রদীপ মন্ডল অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার ভাইকে চাকরি দেয়ার কথা বলে জমি চান স্বপন। তিনি বলেন, স্কুল লাগোয়া ৩ শতক জমি তুমি যদি দাও তাহলে তোমারে চাকরি দেবো। পরে বলেন, জমি লাগবে না, ছয় লাখ টাকা দাও। আমি টাকা দিইনি বলে এখন আমার ভাইকে চাকরি দেবে না।
এলাকাবাসীর আশা ডুমুরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও নৈশ প্রহরী নিয়োগে স্বচ্ছ ও সুন্দর পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাসের হারের চেয়েও ফেলের হার অনেক বেশি। ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্কুলের শহীদ মিনার অযত্ন অবহেলায় ভেঙে পড়েছে ।
বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক গুরুদাস বিশ্বাস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, হেডমাস্টার স্যার কিছু জানেন না। তবে টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে এটা আমি জানি।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এ ব্যাপারে আমার অফিসে একটা অভিযোগ এসেছে এবং উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ এসেছে। কিন্তু আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং স্কুলের সভাপতির সমন্বয়ে এই দুর্নীতির কারসাজি চলছে বলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। আমরা এখানে এসব কাজ করিনি। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বই থেকে প্রশ্ন করি এবং যে মেধাবী তাকে সিলেকশন দেয়া হবে।
নিয়োগ পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কথাটি সম্পূর্ণ অসত্য এবং এখানে একজন রাজনৈতিক বড় নেতা আমাকে বলছেন, ওইখানে ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দুইটি গ্রুপ আছে। এই এক গ্রুপে নিয়োগ দিলে আরেক গ্রুপে এই নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সুন্দরভাবে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আপনাদের নিমন্ত্রণ দেয়া হল।
এসব বিষয়ে জানতে ডুমুরিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কথা বলতে রাজি হলেও পরে ফোনটি বন্ধ করে দেন। তাই তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সঠিক তথ্য প্রমাণ পেলে আমি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে জানাবো।