দৈনিকশিক্ষাডটকম, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ সদরের হাটবয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি শূন্য পদে ২২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চাকরি প্রার্থীরা। পরীক্ষার আগেই কোন প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ৬ জন চাকরি প্রার্থী। তারা ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছেন।
চাকরি প্রার্থীরা জানান, আগামীকাল শনিবার হাটবয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। গত বুধবার এ পদ দুটিতে আবেদনকারীদের বিদ্যালয়ে ডেকে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
কিন্তু এর আগেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর রহমান বকুল, প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন ও সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম যোগসাজশ করে নৈশপ্রহরী পদে একজনের কাছ থেকে ১২ লাখ ও আয়া পদে একজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিষয়টি ওই দুই প্রার্থীর ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাটবয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে নৈশপ্রহরী পদে ৭ জন ও আয়া পদে ৮ জন চাকরির আবেদন করেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ দুটিতে নিয়োগের জন্য ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বুধবার অনেকটা হুট করেই ৩০ ডিসেম্বর বেলা ২টায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের কথা জানানো হয়।
চাকরিপ্রত্যাশী নাইম আহমেদ, ছাকমান আলী ও শান্তি রেজা জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে এলাকাবাসীর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানাজানি হয়। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনজুর রহমান বকুল ও প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেনের নির্দেশে সহকারী শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ নৈশপ্রহরী পদে নওদাশৈলাবাড়ী গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে মো. উজ্জল হোসেনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ও আয়া পদে খলিশাকুড়া গ্রামের জিয়া শেখের স্ত্রী সাথী খাতুনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে সবার মধ্যে জানাজানি হয়।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ছয়জন চাকরিপ্রত্যাশী ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে আবেদন করেন। এই ছয় চাকরি প্রার্থী হলেন- রিমন, শান্তি রেজা, কায়ফা, ছাকমান আলী, নাইম ও রায়হান আলী।
নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য গোলাম মওলা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ কমিটিতে রাখতে মিটিং ডেকেছিল। কথা কাটাকাটি হওয়ায় মিটিং অসমাপ্ত রয়েছে; কিন্তু এখন শুনছি সেই মিটিংয়ের উপস্থিতি স্বাক্ষর রেজুলেশনে দেখিয়ে নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিয়োগের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির ৫ জন সদস্যের কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। অভিযোগ দাখিল করা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে পরবর্তী সব কার্যক্রম পরিচালনা করব।
এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি মনজুর রহমান বকুলের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিমুল্লাহ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি দেরিতে দিয়েছে। অভিযোগের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।