দৈনিক শিক্ষাডটকম, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর শহরে উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে শহীদ স্মৃতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল ফটক বন্ধের কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল হক মাস্টার ৭১ খ্রিষ্টাব্দের শহীদদের স্মরণে ৫০ শতক জমি দিয়ে শহীদ স্মৃতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুলের যাতায়াতের মূল পথ ছিল উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে স্কুলের এই মূল ফটক দিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী যাতায়াত করত। কিন্তু ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে উপজেলা কর্তৃপক্ষ স্কুলের যাতায়াতের মূল পথটি বন্ধ করে দেন।
স্কুল সূত্র জানায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে বিদ্যালয়েন ৫৩১ জন শিক্ষার্থী ছিল। বর্তমানে ১১ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী রয়েছেন। গেট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বর্তমানে ৩৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। ঝরে পড়েছে শতাধিকেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী।
চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্র-ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, স্কুলের ফটকটি বন্ধ করে দেওয়ায় যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। অনেকদূর ঘুরে তাদের স্কুলে আসতে হয়। এ ছাড়া কেউ কেউ মই দিয়ে দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া করে।
একাধিক অভিভাবক জানান, শহীদ স্মৃতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এ গ্রেড স্কুল। লেখাপড়ার মানও ভালো। স্কুলের সামনের পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কষ্ট হয়। বর্তমানে আধা মাইলেরও বেশি ঘুরে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হয়। গেটটি খুলে দেওয়ার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।
স্কুলের সহকারী শিক্ষক তানিয়া নাজনীন ও নার্গিস আক্তার লিপি জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুলের সামনের রাস্তাটি খোলা ছিল। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গেটটি বন্ধ করে দেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীসহ আমরা চরম দুর্ভোগে আছি। চলতি বছরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আসা-যাওয়ার অসুবিধার কারণে অন্যত্র চলে গেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক কে এম জহির উদ্দিন জানান, শহীদ স্মৃতি আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি মডেল স্কুল। এ স্কুলে আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছিল। স্কুলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়েছে। এছাড়া শিক্ষক অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক দূর ঘুরে স্কুলে আসতে হয়। তাই মূল ফটকটি খুলে দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্কুলের সহসভাপতি এ কে এম আজাদ হক জানান, আগের ইউএনও মহোদয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে স্কুলের মূল ফটকটি বন্ধ করে দেন। তিনি আরও বলেন, আমিও এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এখনো আমার ছেলেও এই স্কুলের ছাত্র। আমরা ছোটকাল থেকেই স্কুলের এই পথটি দেখে আসছি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বর্তমানে পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেমন ঝরে পড়ছে তেমনি মানসম্মত শিক্ষাকার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, বিষয়টি পুরনো। আমি এটা নিয়ে কাজ করছি না।