১১ বছর বয়সের কিশোর আরাফাতের চোখে-মুখে বিষণ্নতা। সাধারণ আর দশটা কিশোরের মতো তাঁর জীবন নয়। এই বয়সেই বই-খাতার পরিবর্তে কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের বোঝা। মাত্র ৯ বছর বয়স থেকে সে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরেছে সংসারের হাল। অসুস্থ বাবা আর হতদরিদ্র মায়ের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে ছোট্ট কাঁধে।
সারা দিন শাক বিক্রি করে যে টাকা আয় হয়, তাই দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছে আরাফাত। যে বয়সে পড়ালেখা, খেলাধুলা কিংবা ছোটাছুটি করার কথা, সে বয়সেই উপার্জনের আশায় কাঁধে তুলে নিয়েছে শাক-সবজির ভার। তাঁকে দিনরাত ছুটতে হচ্ছে শহরের অলিগলিতে। ছোট্ট কাঁধে সংসারের বিরাট বোঝা বয়ে বেড়াতে বেড়াতে অনেকটা ক্লান্ত সে। তবু থামার জো নেই। ভাগ্য তাকে সেই সুযোগ দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জয়পুরহাট শহরের হোটেলপট্টি এলাকায় কথা হয় আরাফাতের সঙ্গে। তখন কাঁধে লালশাকের ভার নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ‘শাক নিবেন শাক’ বলে চিৎকার করছিল সে। আরাফাত জানায়, তার বাবা প্রতিবন্ধী। মা ঝিয়ের কাজ করেন। সংসার চালানোর মতো তাঁদের কোনো সামর্থ্য নেই। তাই এই বয়সেই পড়ালেখা ছেড়ে শাক বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছে সে। এতে দিনে ১০০-১৫০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে প্রতিদিন চাল, ডাল ও তরকারি কিনে মা-বাবার মুখে আহার তুলে দেয় আরাফাত।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের পলিকাদোয়া গ্রামে বসবাস করে আরাফাত। মাত্র ৪ শতাংশ জায়গায় নির্মাণ করা মাটির ঘরে বসবাস করে তারা। সেখানে গতকাল সকালে গিয়ে কথা হয় আরাফাতের মা মাসুমা বেগমের সঙ্গে। ছেলের এই বয়সে শাক বিক্রি করে উপার্জনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘উপায় থাকলে কি আর দুধের বাচ্চারে শাক বিক্রি করতে পাঠাতাম? ওর বাবা আধাপাগল। কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। কোনো জমিজমাও নেই। এ অবস্থায় পড়ালেখা বন্ধ করে বাধ্য হয়ে ছেলেকে রোজগারের পথে নামিয়েছি।’ প্রতিবেশী আবু কাশেম বলেন, ‘আরাফাত সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই। ওর শখ ছিল পড়ালেখা করার। কিন্তু পরিবারের আয়-রোজগার না থাকায় এই বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।’