স্কুলের শিক্ষার্থী না হলেও মেয়ের নামে উপবৃত্তি তোলেন প্রধান শিক্ষক

ফরহাদ ইসলাম, জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি |

প্রধান শিক্ষকের মেয়ে পড়েন প্রাইভেট এক স্কুলে। প্রথম শ্রেণি থেকে বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়ছেন প্রধান শিক্ষকের মেয়ে প্রীতিলতা। তবে তার বাবা যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওই স্কুলের উপবৃত্তির তালিকায় আছে তার নাম। স্কুলের হাজিরা খাতা নিয়মিত উপস্থিতি দেখিয়ে নিজের মেয়ের নামেই উপবৃত্তি তুলছেন প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায়।  

প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায়

উপবৃত্তি নিয়ে এমন অনিয়ম হচ্ছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাবা সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ায় নিয়মের তোয়াক্কা না করে জালিয়াতি করে নিজের মেয়েকে স্কুলের শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় নিয়মিত উপস্থিতি দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা নিজের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে তুলে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বশেষ উপবৃত্তির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ৪ নম্বর রোলে প্রীতিলতা নামে একজন শিক্ষার্থীর নাম আছে। যার অভিভাবকের নামের স্থানে আছে প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায়ের নাম। তালিকায় থাকা ওই শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা নিয়মিত চলে যাচ্ছে  প্রধান শিক্ষকের নিজের নগদ অ্যাকাউন্টে। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায়ের মেয়ে প্রীতিলতাকে জলঢাকা পৌরশহরে অবস্থিত আলহেরা এডুকেয়ার হোম উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির নিয়মিত শিক্ষার্থী। সেখানে তার রোল নম্বর ১৯। প্রতিদিন সকাল নয়টায় নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে মেয়েকে ওই স্কুলে নিয়মিত পৌছে দেন প্রধান শিক্ষক। 

প্রীতিলতা যে আলহেরা এডুকেয়ার হোম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রীতিলতা আমাদের স্কুলের নিয়মিত একজন শিক্ষার্থী,সে প্রথম শ্রেণি থেকে বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের স্কুলেই পড়ালেখা করছে। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, তথ্য গোপন করে কোনো প্রধান শিক্ষক উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করলে এবং তা প্রমাণ হলে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার নিয়ম রয়েছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায় দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেন তার মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গত বছরের (২০২২ খ্রিষ্টাব্দের) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাই তার নাম উপবৃত্তির তালিকায় এসেছে। 

গত বছরের তালিকা সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আপডেট করা হয়েছিলো কি-না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, এ বছর উপবৃত্তির তথ্য এন্ট্রি হয়নি। তাই তার নাম বাদ দেয়া যায়নি। তথ্য আপডেট শুরু হলে মেয়ের নাম বাদ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

প্রীতিলতা প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আলহেরা এডুকেয়ার হোম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে বলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিশ্চিত করেছেন জানালে প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন কুমার রায় দাবি করেন, প্রীতিলতা আগে ওই স্কুলে পড়তো, কিন্তু করোনার সময় দীর্ঘদিন ওই স্কুলটি বন্ধ থাকায় তাকে আমার স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ওই স্কুলের ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী না হলে উপবৃত্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

জলঢাকার উপজেলা শিক্ষা অফিসার শরিফা আখতার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিচ্ছি।

জানতে চাইলে নীলফামারীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম এ শাহজাহান সিদ্দিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002918004989624