নারায়ণগঞ্জের তাতখান গোদনাইল চৌধুরী বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় শিক্ষানুরাগী আঞ্জুমান আরা বেগম তার পিতা আমির হোসেন খানের নামে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল। শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুলটির অবস্থান। এলাকার দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা এ স্কুলের ছাত্রছাত্রী। স্কুলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি কোনো স্কুল না থাকার কারণেই স্কুল প্রতিষ্ঠার এই অদম্য উদ্যোগ। ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে প্রথমে শুরু হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটির কার্যক্রম।
বর্তমানে নবম শ্রেণি পর্যন্ত চলছে পাঠ্যক্রম। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। ১ থেকে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসেন। তাদের জন্য রয়েছে দুটি ভ্যানগাড়ি। দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ফ্রিতে পড়াশোনার সুযোগ। লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরকে স্বাস্থ্য সচেতনমূলক শিক্ষা দেয়া হয়। দিন দিন বাড়ছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা।
মাঝেমধ্যে অভিভাবকেরা স্কুলে আসেন। তারা শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের য়সী প্রশংসা করেন। অভিভাবক স্কুলে এলে তাদের জন্য আছে আপ্যায়নের ব্যবস্থা। কিন্তু সীমিত পরিসরে চলছে স্কুলটির কার্যক্রম। যার জন্য লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না বলেই চলে। ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়। দেয়া হয় বিনামূল্যে বই, খাতা, পেন্সিল এবং টিফিন। সব কিছু সামাল দেন আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি নিজেও একজন শিক্ষিকা।
অপর তিন বোন ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত। পরিবারের সকল সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় চলে স্কুলটি। স্কুলের জায়গার পরিমাণ ১২ শতাংশ। স্কুলের পাশেই রয়েছে সরকারি পরিত্যক্ত ডোবা। ডোবাতে পরিপূর্ণ কচুরিপানা সেই সঙ্গে মশার বংশধর। এই জায়গাটিও দিনে দিনে অভিভাবকহীন থাকায় যেকোনো সময় বেদখল হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা আঞ্জুমান আরা বেগমের।
প্রথমে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি। পরবর্তী বছর থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নবম শ্রেণি পর্যন্ত চলছে স্কুল। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা।
মেধার দিক দিয়ে প্রশংসার দাবিদার এই স্কুলটি। জেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছে স্কুলটি। সন্তোষজনক পরিস্থিতি ও ছাত্রীদের গঠনমূলক লেখা দেখে খুশি কর্মকর্তারা। স্কুলটিতে ঘিরে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি মানুষের মনে রয়েছে আগ্রহ। তারা চায় স্কুলটি যেনো হারিয়ে না যায়। অব্যাহত থাকে যেনো স্কুলটির পথ চলা।
প্রতিষ্ঠাতা আঞ্জুমানা আরা বেগম জানান, প্রতি ঈদে ছাত্রছাত্রীদেরকে ভাল খাবার পরিবেশন করা হয়। সেই সঙ্গে দেয়ার ঈদ সামগ্রী। কোরবাণীর সময় তাদের মাঝে বিতরণ করা হয় গরুর মাংস।
তিনি আরো জানান, স্কুলে বেশির ভাগ ছাত্রদের কাছ থেকে নূন্যতম বেতন নেয়া হয়। শিক্ষকদেরকে সাধ্যমতো সম্মানী দেয়া হয়ে থাকে। স্কুলটিতে মোট রয়েছে ১৭ জন শিক্ষক। তন্মধ্যে পুরুষ ৩ জন ১৪ জন নারী।
আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে মাসে আদায় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা থেকে স্কুলের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট কোনো টাকা থাকে না। কিন্তু প্রতি মাসে স্কুলের ব্যয় হয় ৭০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে অতিরিক্ত প্রায় অর্ধেক টাকাই খরচ করে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি ডোবাটি স্কুলের জন্য বরাদ্দ দিলেন এলাকার শিক্ষার মান ও পরিবেশ দিনে দিনে উন্নতি হবে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।