দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দেশটির পুলিশ ইতিমধ্যে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে। তবে বিক্ষোভের মাত্রা সেই অর্থে কমেনি। উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পাসগুলোতেও। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের সময় হয়ে এসেছে।
সিএনএন জানাচ্ছে, বিক্ষোভ চলছে এমন চারটি ক্যাম্পাসে চলতি সপ্তাহান্তে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে চলতি মাসে ও জুনে এই আয়োজন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভের মধ্যে সেই অনুষ্ঠান কতটুকু সুষ্ঠুভাবে হবে না নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তাল রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে চলছে টানা বিক্ষোভ। অনেক ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান চলছে। বিবিসি বলছে, গত মাসে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভের সূচনা। পরে ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ৪৫টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় ১৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। এখন বিক্ষোভকারীরা স্নাতক সমাপনী আয়োজনে বাধা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। এসব আয়োজন বর্জন করা, অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসা বা ওয়াকআউট করাসহ বিভিন্ন বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন।
অবশ্য স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টায় রয়েছে ক্যাম্পাসগুলো। কয়েকটি ক্যাম্পাসে আগামীকাল সোমবার বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ বল প্রয়োগ করবে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিএনএন বলছে, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি (আইইউ) ক্যাম্পাস থেকে দুই দফায় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এখন আইইউ ডাইভেস্ট অ্যান্ড দ্য প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে ওয়াকআউটের ডাক দিয়েছে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটে। এর মধ্যে গতকাল তিনটি ক্যাম্পাসে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেকোনো ব্যানার ও পতাকা বহন করা নিষিদ্ধ থাকবে। সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানস্থলে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন। বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিক্ষোভকারীদের সংগঠন তাহরির কোয়ালিশন প্রোটেস্ট গ্রুপের আলিফা চৌধুরী। তিনি শুধু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ আলোচনার প্রস্তাব পুরোপুরি উপেক্ষা করেছে।
ওয়াইও স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট টেড কার্টার শিক্ষার্থীদের বাগ্স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে সতর্ক করে বলেছেন, যেকোনো আয়োজন, ক্লাস, পরীক্ষায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে নিয়ম মেনে তা প্রতিহত করা হবে। আজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। এই আয়োজনে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, তা নিশ্চিত করেননি এখানকার ফিলিস্তিনি-আমেরিকান শিক্ষার্থী হেবা লতিফ।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ১৫ মে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ক্যাম্পাস চরম উত্তাল ছিল। বিক্ষোভকারীরা একটি ভবন দখলে নেন। পরে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ওই ভবন উদ্ধার করে। ব্যাপক ধড়পাকড় চালায়। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল বলেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া হবে।
তবে এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ বলেছে, আগামী সোমবারের মধ্যে বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাস না ছাড়লে নিয়ম মেনে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করবে।