জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। একইসঙ্গে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ৫০ শতাংশ পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন ও প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের পদসহ পরিদর্শন শাখার অন্যান্য সব পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়নের দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা এসব দাবি জানান। 'স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন কমিটি' নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি মাধ্যমিক স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান ও সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির খুলনা অঞ্চল কমিটির সভাপতি মমতাজ খাতুন নেতৃত্ব দেন। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষক নেতা ওমর ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বলেন, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর নামে দুটি আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কথা বলা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দিন দিন মাধ্যমিক শিক্ষা অবহেলিত হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষক নেতা মমতাজ খাতুন বলেন, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে যোগদান করে অনেক শিক্ষক এখনো সহকারী শিক্ষক, কেউ সিনিয়র শিক্ষক, কেউ সহকারী প্রধান শিক্ষক আবার কেউ প্রধান শিক্ষক। একই ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে চারটি ভাগ হয়েছে। শিক্ষকদের টাইম স্কেল দেয়া হচ্ছে না।
শিক্ষক নেতারা বলেন, আমাদের সমস্যার কথা বলে না অধিদপ্তর। হয়তো আমরা সমস্যাগুলো সম্পর্কে অধিদপ্তরে জানায় কিন্তু অধিদপ্তর থেকে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় না। তারা আরও বলেন, প্রায় ২৪ হাজার প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মাধ্যমিক। সাড়ে তিন হাজার কলেজ। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা।
সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর হলে এবং তার নিয়ন্ত্রণে সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকরা থাকলে সরকারি স্কুলের সমস্যাগুলো দূর হবে। তাই তারা আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো, স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন, সহকারী শিক্ষকদের বিদ্যমান পদের আপগ্রেডেশন করে এন্ট্রিপদ নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ, সরকারি কলেজের মতো চার স্তরীয় পদসোপান বাস্তবায়ন, বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮০ অনুযায়ী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা (ক্যাডারভুক্ত) বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রস্তাবিত পৃথক মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাসি) পরিচালক এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের পদসহ পরিদর্শন শাখার অন্যান্য সব পদে শতভাগ পদায়ন নিশ্চিত করা।
শিক্ষকদের দাবির মধ্যে আরও আছে, দ্রুত দীর্ঘদিনের বকেয়া টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরী আদেশ প্রদান, বিভিন্ন সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক নিয়মিত পদোন্নতি নিশ্চিত করা, ২০১০ (অংশ) ও ২০১১ ব্যাচের সহকারী শিক্ষকদের সিনিয়র শিক্ষকের শূন্য পদে পদোন্নতি দেয়া, সিনিয়র শিক্ষকদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৫০ভাগ পদে দ্রুত বিধি মোতাবেক পদায়ন নিশ্চিত করা, কর্মরত সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষক, সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শিকা পদে পদায়ন, দ্রুত নন-ক্যাডার শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ নিশ্চিত করা, অগ্রীম বর্ধিত বেতন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার দ্রুত নিরসন এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা বাস্তবায়ন ।