স্বপ্ন পূরণ করে এসআই থেকে শিক্ষা ক্যাডারে জহিরুল

দৈনিকশিক্ষাডটকম, মির্জাগঞ্জ |

দৈনিকশিক্ষাডটকম, মির্জাগঞ্জ : বই আমাদের মনের খোরাক, বই মানুষকে বদলে দিতে পারে। অজানা, অদেখা, বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয় বই। আমরা বইয়ের মাধ্যমে মুহূর্তে ছুটে যেতে পারি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। কথাগুলো বলছিলেন, ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রকাশিত ফলাফলে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া মো. জহিরুল ইসলাম। 

তিনি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চাকরি করছেন গত ২ বছর ধরে। ‘হারার আগে হারবো না’ এটিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলেন তিনি। 

তিনি বলছিলেন, পারি বা না-পারি, আমি চেষ্টা চালিয়ে যারো। পরিশ্রম করে যাবো। সে অনুযায়ী আমি চেষ্টা চালিয়ে যাই। সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস, ত্যাগ, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের ফলেই মানুষ তার সফলতার উচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার মো. ইউসুফ শিকদার এবং শাহিদা পারভিন দম্পতির তৃতীয় সন্তান তিনি। মধ্যবিত্ত ও কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া জহিরুল ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে এসএসসি এবং বরিশালের সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ থেকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হবেন এটা ছিলো স্বপ্ন তার। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত থেমে থাকেননি তিনি।
 
জহিরুল ইসলাম বলেন, বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্ট হওয়ায় শুরুতে ব্যাংকিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার পরিকল্পনা ছিলো। শুরুর দিকে প্রস্তুতিও ছিলো সেই দিকে লক্ষ্য রেখে। কিন্তু ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেলে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়ার আশায় আবেদন করি। তখন থেকেই বিসিএসের পড়াশোনা মনোযোগ দিই। 

তিনি আরো বলেন, ৩৮তম বিসিএসে প্রিলিতে টিকে যাই। এর মধ্যে এসআইতে সুযোগ হয়। ট্রেনিং চলতে থাকে। তখন থেকেই কর্মজীবন শুরু করলেও বিসিএসের প্রতি ঝোক ছিলো অন্যরকম। কারণ বিসিএস ছিল আমার স্বপ্ন। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে চাইলাম। চাকরি এবং পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়মিত ধরে রাখা খুবই কঠিন ছিলো। এর মধ্যে ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেই। কিন্তু তখন পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিংয়ে থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিলেও সেটাতে সাফল্য পাইনি। ৪১তম বিসিএসে প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হলেও মৌখিক পরীক্ষা শেষে নন-ক্যাডারে আটকে যাই। সাফল্য ধরা দেয় ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায়। 

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নানা রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ, আমি যে চাকরি করি সেটা অন্য যেকোনো চাকরির থেকে ভিন্ন। এখানে নিজের জন্য ব্যক্তিগত সময় নেই বললেই চলে। এরই মধ্য দিয়ে যতোটুকুই সময় পেয়েছি আমি শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। এমনো হয়েছে পরদিন সকালে পরীক্ষা কিন্তু আগের দিন রাত পর্যন্ত থানায় অনেক কাজের চাপ ছিলো। আবার কখনো এমনো হয়েছে যে, পরীক্ষার আগের রাতেও কোনো না কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে এভাবেই ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করেছি। 

পরীক্ষা বা ভাইভার সময় আসলেই মনে হতো কাজের ব্যস্ততা আরো বেশি বেড়ে যেতো। কিন্তু আমি একটি বিষয় সব সময় মনে রেখেছি যে হাল ছাড়বো না। হতাশ হওয়া যাবে না। প্রস্তুতি যেমনই হোক প্রায় সব পরীক্ষাতে অংশ নিয়েছি। কোনো পরীক্ষাই মিস হতে দিইনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অন্যান্য চাকরিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকলেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবেই যোগদান করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করতে চাই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না - dainik shiksha রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী - dainik shiksha মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010225057601929