স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

‘স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ এর দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার পৃথক মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এ স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়। পরে এতে ‘বিবেচনার জন্য গ্রহণ করলাম’ লিখে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষর করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে, এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। যার ফলে যে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্যের কথা বলে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেটা বিগত ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

আমরা মনে করি, দীর্ঘদিনের অধিভুক্তির পরও যেখানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার মানের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, সেখানে এমন অধিভুক্তি ধরে রাখা অর্থহীন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সাত কলেজের অধিভুক্তির বিপক্ষে। সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে তাদেরকে মাঠেও কর্মসূচি করতে দেখা গেছে। এখন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেরাও অধিভুক্তি বাতিলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের সমস্যার চিত্র তুলে ধরে আরও বলেন, ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়ণে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়া-এসব সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে। ফলস্বরূপ, সাত কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বারবার একে অপরের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দিয়ে এসব সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন।

তারা বলেন, দেশ বর্তমানে একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের দাবি বাস্তবায়নে সমাবেশ বা সড়ক অবরোধের ফলে জনদুর্ভোগ সৃষ্ট হয়-এমন কোনো ধরনের কর্মসূচিতে যেতে চাচ্ছি না। সে লক্ষ্যে আমরা গত রোববার ঢাকা কলেজে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে আমাদের সমস্যা ও দাবির বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত তুলে ধরেছি। দেশের প্রায় সবগুলো প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এ খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে রাজধানীর এ সাতটি কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। একই দাবি বাস্তবায়নে গত রোববার ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।

দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা সম্মেলন থেকে ৪টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এগুলো হলো:

অনধিক ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সাত কলেজের সংকট নিরসনে একটি সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে; সংস্কার কমিশন ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে শুধু মাত্র সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবে; সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আলোকে সরকার সাত কলেজকে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে; সংস্কার কমিশন বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে চাবি প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে যাতে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ভোগান্তি না হয়।

এ সময় ঢাকা কলেজের ছাত্র মো. আব্দুর রহমান, সরকারি তিতুমীর কলেজের তসলিম চৌধুরী, ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান, কবি নজরুল সরকারি কলেজের জাকারিয়া বারী সাগর, সরকারি বাঙলা কলেজের শাহারিয়া রাব্বি, সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের জাফরিন ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবরিনা সুলতানাসহ কলেজগুলোর অন্তত ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়া নিয়ে ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, উপদেষ্টা নানা ব্যস্ততার মাঝেও সাত কলেজ নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সময় নিয়ে শুনেছেন। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, সাত কলেজের শোষণ-বঞ্চনা সম্পর্কে উপদেষ্টা আগে থেকেই অনেকটা অবগত আছেন। আজ আমরা তাকে নতুন করে লিখিত আকারে সে তথ্যটা স্মরণ করিয়ে দিলাম। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044012069702148