স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দাপটে বেতন বঞ্চিত শিক্ষকরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি |

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার ডা. মোসলেম উদ্দিন খান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন কবে, কোথায় হয়েছে, পরিচালনায় কারা ছিলেন তা জানেন না খোদ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম।  

কলেজ শিক্ষক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দেলোয়ার হোসেন ২৬ বছর ধরে এ কলেজের অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। কলেজটি অধ্যক্ষের অনিয়মে  ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কলেজে ডিগ্রি স্তরটি এমপিওভুক্ত ছিল, কিন্তু ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটা বন্ধ করে দেয়।

জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল আলীম বেপারী অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে গোপনে কলেজের নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য করেন এমন অভিযোগ রয়েছে, এছাড়া রেজুলেশন তৈরি করে তাদের পকেট কমিটি সাজান। এ কমিটি কখনও মিটিংও করে না। এছাড়া অধ্যক্ষ নিয়মিত কলেজেও আসেন না। বেশির ভাগ সময় তাঁর বাসা মাদারীপুরেই থাকেন। মাদারীপুরে বসেই শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন-বিলে স্বাক্ষর করে বিল ব্যাংকে পাঠিয়ে সরকারি টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ করছেন। কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের কথা যেসকল শিক্ষকরা শুনেন না তাদের বেতন-ভাতা-বিলে ও পদোন্নতির কাগজে স্বাক্ষর করেন না তারা। স্বাক্ষর না দেয়ায় কোনো শিক্ষক ৪ বছর, কেউ ৬ মাস ধরে বেতন পান না। অধ্যক্ষের কথা মতো না চলায় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক পরিতোষ সরকার ৩০ বছর, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক সরজিৎ কুমার রায় ২৮ বছর ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নিজামুল ইসলাম ২৬ বছর ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক তুষার কান্তি বিশ্বাস ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কামাল হোসেনকে ১১ বছরের মাথায় পদোন্নতি দেয়া হয়।

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য তাজুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত দুই বছরে কমিটির কোনো মিটিং হয়নি। মাঝে মাঝে তাঁকে খাতায় স্বাক্ষর দিতে বলেন অধ্যক্ষ। কলেজের গাছগুলো বিক্রি করে টাকা নিয়ে গেছেন অধ্যক্ষ।

কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক সরজিৎ কুমার রায় বলেন, ২৮ বছর ধরে একই পদে রয়েছেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তাকে পদোন্নতি না দিয়ে ১১ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক তুষার কান্তি বিশ্বাস ও কামাল হোসেনকে পদোন্নতি দেন। তিনি পদোন্নতি পেতে আদালতে মামলা করেন। এ কারণে অধ্যক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার (সরজিৎ) বেতন-বিলে স্বাক্ষর দেয়া বন্ধ করে দেন। ফলে হাইকোর্টে বেতন পাওয়ার জন্য রিট করেন। হাইকোর্ট তাকে বেতন দেয়ার জন্য বললেও ৬ মাস ধরে তাকে বেতন দেয়া হয় না।

হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ কলেজে কোনো নির্বাচন না দিয়েই পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আলীম বেপারী। তিনি এর প্রতিবাদ করায় সভাপতি ও অধ্যক্ষ ৪ বছর ধরে তার বেতন-বিলে স্বাক্ষর করা বন্ধ করে দেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনি তপসিল প্রকাশ বা নোটিশ দেয়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান শিবচরের একটি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই দুই স্থান থেকে বেতন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া কলেজে গ্রুপিং চলে। তিনি গেলে তার ওপর হামলা হতে পারে এই ভয়ে কলেজে কম যান। হাজিরা খাতা যেখানে-সেখানে রাখার জিনিস না, তাই তার সঙ্গেই রাখেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আব্দুল আলীম বেপারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জাজিরার ইউএনও কামরুল হাসান সোহেল বলেন, মোসলেন উদ্দিন খান কলেজের বিষয়ে তার কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027680397033691