দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া : চকচকে পরিষ্কার। কোথাও এক টুকরো কাগজ পড়ে নেই। ময়লা আবর্জনাও চোখে পড়বে না। এমন ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেলওয়ে স্টেশন দেখলে বিস্ময় সৃষ্টি হতে পারে। মনে হতে পারে অন্য কোথাও নয় তো!। এমন কৃতিত্ব এক দল কিশোর শিক্ষার্থীর। তপ্ত দুপুরে চৈত্রের দহন বা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ কোনো কিছুই তাদের প্রতিবন্ধকতা হতে পারেনি, ভালো কিছু করার উদ্যোগের সামনে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এক ঝাঁক স্বপ্নবাজ কিশোর বগুড়ায় হাত লাগিয়েছেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে। শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানই নয় পুরনো বই-খাতা বিক্রির টাকার সঙ্গে জমানো টাকা নিয়ে দুস্থদের হাতে ইফতার পৌঁছে দেওয়াসহ পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের জমানো টাকা ব্যয়ে করেছেন বৃক্ষ রোপণ। বগুড়ার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কাউট সদস্য মিলে মুক্ত স্কাউটদের একটি গ্রুপ নিয়েছে এই প্রশংসনীয় দৃষ্টান্তমূলক এই উদ্যোগ।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে নির্দ্বিধায় নোংরা আবর্জনা হাত দিয়ে তুলে পরিষ্কার এবেং ঝাড়ু হাতে দিনমান তাদের এই অনুসরণীয় তৎপরতা ছিল সোমবার বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়। স্কুলের শিক্ষার্থী স্কাউট সদস্যদের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আশপাশের লোকজনকে নাড়া দেয়। শাজাহানপুর মুক্ত স্কাউট গ্রুপ নামে স্কাউট সদস্যদের একটি ইউনিটের আয়োজনে এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান স্টৈশনের আশপাশ থাকা লোকজন ও যাত্রীদের বিস্মিত করে তোলে। প্রচ- গরমে ঘামে ভিজে শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান চালান।
বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদনান হোসাইন জানালেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা তাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার কাজে অনুপ্রাণিত করেছে। তার কথা অন্য দেশ যদি সুন্দর ও উন্নত হতে পারে তা হলে নিজেরা নাগরিক দায়িত্ব পালন করলে আমরাও সুন্দর পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে সবার সামনে নিজেদের তুলে ধরতে পারব।’
এ বিষয়ে দায়িত্ব বোধ থেকেই সে স্কাউটের এই গ্রুপের সংঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। গ্রুপের সিদ্ধান্ত ছিল- শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান নয়, নিজেরাই টাকা দিয়ে দুস্থ মানুষের পাশে ইফতার নিয়ে দাঁড়ানো ও বৃক্ষ রোপণ। সে জন্য প্রত্যেকের অংশগ্রহণের জন্য সাড়ে ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ জন্য আদনান নিজের আগের শ্রেণির পুরনো বই-খাতা বিক্রি করে ১২০ টাকার সঙ্গে নিজের সঞ্চিত টাকা (পকেট মানি) দিয়ে বাকিটা পূরণ করেন।
বগুড়া এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলের শিক্ষার্থী আবু হুজাইফা রিশাত নিজের পুরনো বই ও খাতা বিক্রির ২২০ টাকার সঙ্গে সঞ্চিত টাকা মিলিয়ে এই উদ্যোগে অন্যদের মতো অংশ নিয়েছেন। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের সাদমান সজীব জানালেন নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে তার একটুও খারাপ লাগেনি। দেশের জন্য কাজ করছেন এটাই বড় কথা। বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ, বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ, করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল ও কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল ও কলেজ এবং মাঝিড়া মডেল স্কুলের শিক্ষার্থী, স্কাউট সদস্যদের নিয়ে এই গ্রুপটি গঠন হয়েছে।
মোট ১৭ জন সদস্য সোমবারের কার্যক্রমে অংশ নেন। মাঝিড়া স্কুলের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান জানান, গত বছর স্কাউট জাম্বুরিতে উন্নত দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। শাজাহানপুর মুক্ত স্কাউট গ্রুপের সদস্য ও টিম লিডার বগুড়া জেলা স্কাউটের নির্বাহী সদস্য নোমাইন আহম্মেদ নিশাত একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। চাকরি করেন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠনে। তবে স্কাউটের কারণে সমাজ সেবামূলক কাজে আগে থেকেই ঝোঁক রয়ে যায়। স্কুল থেকেই তিনি স্কাউট টিমে রয়েছেন। চাকরি জীবনে এসেও তাই একই ধরনের কাজ করেন।
এখন রয়েছেন শাজাহানপুর মুক্ত স্কাউট ইউনিটে। এটি বগুড়া জেলা স্কাউটের অধীনে। স্বাধীনতা দিবসে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে উদ্যোগী হয়ে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনসহ স্টেশন চত্বর পরিষ্কার কথার চিন্তা আসে। কারণ হিসেবে জানালেন, অনেক বেশি মানুষ এখানে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। এই জনবহুল স্থানটি যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা যায় তা হলে অনেকের উপকার ও একটি মেসেজ দেওয়া যাবে। সেবামূলক কাজ স্কাউটের একটি উদ্দেশ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সুন্দর পরিচ্ছন্ন দেশ চাই।
এ জন্যই তারা নিজেরাই টাকা তুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছেন। আগামীতেও তারা এই অভিযান অব্যাহত রাখতে চান। শিক্ষার্থীরা সোমবার সারাদিন স্টেশন এলাকা পরিষ্কারের সময় প্রায় ২৫ বস্তা ময়লা আবর্জনা সরান। পরে তারা বৃক্ষ রোপণ ও দুস্থদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেন। বগুড়া স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নিজেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্টেশন পরিচ্ছন্ন অভিযানে অংশ নেন। আশপাশের লোকজন রেলস্টেশন পরিষ্কারে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানান।