স্বাধীনতার সুফল জনগণকে পৌঁছে দিতে পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় হবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট প্রশাসনের পাশাপাশি স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি সবার আগে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন জনগণের ভূমিকা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
রোববার রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশের কাজের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালে যখন আপনজনও পাশে ছিল না, সেসময় পুলিশ সদস্যরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার বিতরণ করেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের ৯৯৯ সেবা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর ফলে মানুষ সহজেই বিপদ-আপদে পুলিশকে পাশে পাচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে পুলিশের পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীরাও সুনামের সাথে কাজ করছে।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সমস্যাকে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে, সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিরও রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। একাডেমির দেশপ্রেমিক ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী শহীদ হন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস পুলিশের নবীন কর্মকর্তারাও তাদের পূর্বসূরিদের ন্যায় দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের তিন মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনমানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সেবা প্রাপ্তি সহজতর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, বৈদেশিক নীতি ও সম্পর্ক, গ্রামীণ ও নগর অবকাঠামো, ব্যবসা বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা-প্রতিটি সেক্টরেই আজ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এর মাধ্যমে মহাকাশেও আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে পুলিশ একাডেমির হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি পুলিশ একাডেমিতে সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অভিবাদন গ্রহণ এবং প্যারেড পরিদর্শনে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী কর্মকর্তাদের মাঝে ট্রফি বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী সারদার প্রিন্সিপাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিকসহ বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।