দৈনিকশিক্ষাডটকম, চাঁদপুর: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা সবাই মিলে যে স্বাধীনতা ভোগ করি, সে স্বাধীনতা বীর বাঙালি ছিনিয়ে এনেছিলেন। নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাঙালি জাতি।
যে জাতি ছিল নিরস্ত্র এবং যোদ্ধা নয়, এই পরিচয় ছিল তাদের। এই বাঙালি জাতির পিতার ডাকে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে সশস্ত্র বাঙালিতে পরিণত হয়েছিলেন। একটি প্রশিক্ষিত এবং আধুনিক অস্ত্র-শস্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সেদিন দেশের সর্বত্র পরাজিত করেছিলেন।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে ‘চাঁদপুর মুক্ত দিবস’-এ মাসব্যাপী ৩২তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সেই পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরেরা এই মাসে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর আজকে যেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, যেটি সে সময় ছিল রেসকোর্স ময়দান। সেই রেসকোর্স ময়দানে অপরাহ্ণে তারা সেদিন আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আজকে সেই স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর আমরা সেই সব মানুষকে গভীরভাবে স্মরণ করতে চাই, যারা এই বাঙালি জাতির ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে অবদান, ত্যাগ স্বীকার ও জাতির সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে জীবন বাজি রেখেছেন।
বিজয় মেলা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন-আমি মনে করি এই মেলা গৌরব ও গর্বের বিষয়। এইরকম মাসব্যাপী বিজয় মেলা কিন্তু দেশের সব জেলায় হয় না। চাঁদপুরে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের উদ্যোগে এই বিজয় মেলা এখন ঐক্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এ জন্য আয়োজকদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।
দীপু মনি বলেন, আজকে এখানে নতুন প্রজন্মের অনেকে আছে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-আমরা যেন প্রতি মুহূর্তে মনে রাখি আমরা আজকে স্বাধীন দেশে নির্ভয়ে নিশ্বাস নিতে পারি, একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমরা চলতে পারি, আমরা নতুন স্বপ্ন দেখতে পারি প্রতিদিন, স্বাধীনতা আমাদের এই শক্তি, সাহস, স্বপ্ন ও সবকিছু দিয়েছে। সেই স্বাধীনতার যে মূল চেতনা, সেই চেতনা যেন প্রতি মুহূর্তে ধারণ করি। সেই চেতনা হচ্ছে একটি অগ্রসর চিন্তা। এই দেশটি হবে অসম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্ম-বর্ণ, জাতি সত্তা নির্বিশেষে সবাই সমান মানবিক মর্যাদা নিয়ে, নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে তারা বসবাস করবে।
মন্ত্রী বলেন, যার নেতৃত্বে আজকে মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাগুলো ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আজকে আমি এই মঞ্চ থেকে সেই মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। যিনি দীর্ঘ ৪২ বছর আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, কখনো তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী, সংগ্রামী নেতা হিসেবে এবং জাতির পিতার গর্বিত সন্তান হিসেবে কাজ করছেন। বীর জাতির সেই বীর কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞা জানাই। তার কারণে আজকে আমরা সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে এবং স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করে আজকে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমাদের তরী বিড়িয়ে দিবেন, আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই বন্দরে। সেটি আমাদের সবার প্রত্যাশা। তাহলে আজকের যে তরুণ প্রজন্ম তাদের জন্য তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছেন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সমস্ত তরুণদের আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি তাদের জন্য পরিবেশ ও কাজের সুযোগ, শিক্ষার সুযোগ সমস্তু কিছু তৈরি করে দিয়েছেন। আজকে প্রতিটি মানুষ, নারী-পুরুষ, যে কোনো বয়সী মানুষের জীবন নিয়ে চলবার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। আসুন আমরা আজকে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।
বিকেলে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় ও মেলার পতাকা উত্তোলন করে মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। পরে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রীসহ সব অতিথিকে ফুল ও উপহার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মেলার স্টিয়ারিং কমিটির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম।
মেলার সদস্য সচিব হারুন আল রশিদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান গণি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন-আমরা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান চাঁদপুর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাড. জাফর ইকবাল মুন্না।
এসময় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী মাস্টার, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ পাটওয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।